বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ২৫৫ উন্নতি সম্বন্ধে ইহাদের ধারণা অভাবনীয় ধরণের উচ্চ নয়-ছ'টি মহিষের স্থানে দশটা মহিষ না-হয় বারোটা মহিষ--এই সুদূর দুৰ্গম অরণ্য ও শৈলমালা বেষ্টিত বন্য দেশেও মানুষের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা কেমন, জানিবার সুযোগ পাইয়া আজকার জ্যোৎস্না-রাতটাই আমার নিকট অপূর্ব্ব রহস্যময় মনে হইল। শুধু জ্যোৎস্নারাত কেন, মহালিখারূপের ঐ পাহাড়, দূরে ওই ধন্ঝরি শৈলমালা, ঐ পাহাড়ের উপরকার ঘন বনশ্রেণী ।

 কেবল যুগলপ্রসাদ এ-সব বৈষয়িক কথাবার্ত্তায় থাকে না। ও আর এক ধরণের ব্রাত্য মন লইয়া পৃথিবীতে আসিয়াছে--জমি-জমা, গরু-মহিষের আলোচনা করিতে ভালও বাসে না, তাহাতে যোগও দেয় না ।

সে বলিল-সরস্বতী কুণ্ডীর পূব পাড়ের জঙ্গলে যতগুলো হংসলতা লাগিয়েছিলাম, সবগুলো কেমন ঝাঁপালো হয়ে উঠেছে দেখেছেন বাবুজী ? এবার জলের ধারে স্পাইডার-লিলির বাহারও খুব। চলুন, যাবেন জ্যোৎস্নারাতে বেড়াতে ?

 দুঃখ হয়, যুগলপ্রসাদের এত সাধের সরস্বতী কুণ্ডীর বনভূমি--কত দিন বা রাখিতে পারিব ? কোথায় দূর হইয়া যাইবে হংসলতা আর বন্য শেফালিবন ! তাহার স্থানে দেখা দিবে শীর্ষ-ওঠা মকাই ও জনারের ক্ষেত এবং সারি সারি খোলা ছাওয়া ঘর, চালে চালে ঠেকান, সামনে চারপাই পাতা ।...কাদা-হাবড় আঙিনায় গরু-মহিষ নাদায় জাব খাইতেছে।
 এই সময় মটুকনাথ পণ্ডিত আসিল। আজকাল মটুকনাথের টোলে প্রায় পনরটি ছাত্র কলাপ ও মুগ্ধবোধ পড়ে। তাহার অবস্থা আজকাল ফিরিয়া গিয়াছে । গত ফসলের সময় যজমানদের ঘর হইতে এত গম ও মকাই পাইয়াছে যে, টোলের উঠানে তাহাকে একটা ছোট গোল বাঁধিতে হইয়াছে ।
 অধ্যবসায়ী লোকের উন্নতি যে হইতেই হইবে--মটুকনাথ পণ্ডিত তাহার অকাট্য প্রমাণ ।
 উন্নতি!--আবার সেই উন্নতির কথা আসিয়া পড়িল ।
 কিন্তু উন্নতির কথা না আসিয়া উপায় নাই । চোখের উপর দেখিতে পাইতেছি