পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেঁদ—চারা, শাল—চারা, পলাশ, মহুয়া, কুলের অরণ্য—প্রস্তরাকীর্ণ রাঙা মাটির ডাঙা, উঁচু-নিচু। মাঝে মাঝে মাটির উপর বন্য হস্তীর পদচিহ্ন। মানুষজন নাই।

 হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলাম লবটুলিয়ার নূতন তৈরি ঘিঞ্জি কুশ্রী টোলা ও বস্তি এবং একঘেয়ে ধূসর, চষা জমি দেখিবার পরে। এ-রকম আরণ্য প্রদেশ এদিকে আর কোথাও নাই।

 এই পথের সেই দুটি বন্য গ্রাম- বুরুডি ও কুলপাল- বেলা বারোটার মধ্যেই ছাড়াইলাম। তার পরেই ফাঁকা জঙ্গল পিছনে পড়িয়া রহিল- সম্মুখে বড় বড় বনস্পতির ঘন অরণ্য। কার্তিকের শেষ, বাতাস ঠাণ্ডা- গরমের লেশমাত্রও নাই।

 দূরে দূরে ধন্‌ঝরি পাহাড়শ্রেণী বেশ স্পষ্ট হইয়া ফুটিল।

 সন্ধ্যার পরে কাছারিতে পৌঁছিলাম। যে বিড়িপাতার জঙ্গল আমাদের স্টেট নিলামে ডাকিয়া লইয়াছিল, এ-কাছারি সেই জঙ্গলের ইজারাদারের!

 লোকটা মুসলমান, শাহাবাদ জেলায় বাড়ি। নাম আবদুল ওয়াহেদ। খুব খাতির করিয়া রাখিয়া দিল। বলিল- সন্ধের সময় পৌঁছেছেন, ভালো হয়েছে বাবুজী। জঙ্গলে বড় বাঘের ভয় হয়েছে।

 নির্জন রাত্রি।

 বড় বড় গাছে শন্ শন্ করিয়া বাতাস বাধিতেছে।

 কাছারির বারান্দায় বসিবার ভরসা পাইলাম না কথাটা শুনিয়া।

 ঘরের মধ্যে জানালা খুলিয়া বসিয়া গল্প করিতেছি-হঠাৎ কি একটা জন্তু ডাকিয়া উঠিল বনের মধ্যে। যুগলকে বলিলাম- কি ও? যুগল বলিল- ও কিছু না, হুড়াল। অর্থাৎ নেকড়ে বাঘ।

 একবার গভীর রাত্রে বনের মধ্যে হায়েনার হাসি শোনা গেল-হঠাৎ শুনিলে বুকের রক্ত জমিয়া যায় ভয়ে, ঠিক যেন কাশরোগীর হাসি, মাঝে মাঝে দম বন্ধ হইয়া যায়, মাঝে মাঝে হাসির উচ্ছ্বাস।

 পরদিন ভোরে রওনা হইয়া বেলা ন-টার মধ্যে দোবরু পান্নার রাজধানী চক্‌মকিটোলায় পৌঁছানো গেল। ভানুমতী কি খুশি আমার অপ্রত্যাশিত