বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রসাদই যে সেগুলি নাঢ়া-বইহারের জঙ্গলে আমদানি করিয়াছিল একদিন- একথা না-ই বা কেহ বলিল!

 ভানুমতী বলিল- বাঁয়ে ওই সেই টাঁড়বারোর গাছ- চিনেছেন?

 বন্য-মহিষের রক্ষাকর্তা সদয় দেবতা টাঁড়বারোর গাছ অন্ধকারে চিনিতে পারি নাই। আকাশে চাঁদ নাই, কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি।

 অনেকটা নামিয়া আসিয়াছি। এবার সেই ছাতিম বন। কি মিষ্টি মনমাতানো গন্ধ!

 ভানুমতীকে বলিলাম- একটু বসি।

 পরে সেই বনপথে অন্ধকারের মধ্যে নামিতে নামিতে ভাবিলাম, লবটুলিয়া গিয়াছে, নাঢ়া ও ফুলকিয়া বইহার গিয়াছে-কিন্তু মহালিখারূপের পাহাড় রহিল-ভানুমতীদের ধন্‌ঝরি পাহাড়ের বনভূমি রহিল। এমন সময় আসিবে হয়তো দেশে, যখন মানুষে অরণ্য দেখিতে পাইবে না-শুধুই চাষের ক্ষেত আর পাটের কল, কাপড়ের কলের চিমনি চোখে পড়িবে, তখন তাহারা আসিবে এই নিভৃত অরণ্যপ্রদেশে, যেমন লোকে তীর্থে আসে। সেই সব অনাগত দিনের মানুষদের জন্য এ বন অক্ষুন্ন থাকুক।


 রাত্রে বসিয়া জগরু পান্না ও তাহার দাদার মুখে তাহাদের সম্বন্ধে অনেক কথাবার্তা শুনিলাম। মহাজনের দেনা এখনো শোধ যায় নাই, দুইটি মহিষ ধার করিয়া কিনিতে হইয়াছে, না কিনিলে চলে না, গয়ার এক মারোয়াড়ী মহাজন আগে আসিয়া ঘি কিনিয়া লইয়া যাইত-আজ তিন চার মাস সে আর আসে না। প্রায় আধ মন ঘি ঘরে মজুত, খরিদ্দার নাই।