পথে চামটার বিল পড়িল, শীতের শেষেও সিল্পী আর লাল হাঁসের ঝাঁকে ভর্ত্তি। আর একটু গরম পড়িলেই উড়িয়া পাইবে। মাঝে মাঝে নিতান্ত দরিদ্র পল্পী। ফণীমনসা-ঘেরা তামাকের ক্ষেত ও খোলায় ছাওয়া দীন-কুটীর।
সুংঠিয়া গ্রামে হাত ঢুকিলে দেখা গেল পথের দু-ধারে সারবন্দী লোক গড়াইয়া আছে আমার অভ্যর্থনা করিবার জণ্ঠ। গ্রামে ঢুকিয়া অল্প দূর পরেই নন্দলালের বাড়ী।
খোলায় ছাওয়া মাটির ঘর আট-দশখানা-সবই পৃথক পৃথক প্রকাণ্ড উঠানের মধ্যে ইতস্তত ছড়ানো। আমি বাড়ীতে ঢুকিতেই দুই বার হঠাৎ বন্দুকের আওয়াজ হইল। চমকাইয়া গিয়াছি—এমন সময়ে সহাস্যমুখে নন্দলাল ওঝা আসিয়া আমায় অভ্যর্থনা করিয়া বাড়ীতে লইয়া গিয়া একটা বড় ঘরের দাওধার চেয়ারে বসাইল। চেয়ারখানি এদেশের শিশুকাঠের তৈমারী এবং এদেশের গ্রাম্য মিস্ত্রীর হাতেই গড়া। তাহার পর দশ-এগার বছরের একটি ছোট মেয়ে আসিয়া আমার সামনে একখানা থাকা ধরিল-থালায় গোটাকতক আস্ত পান, আস্ত সুপারি, একটা মধুপর্কের মত ছোট বাটিতে সামান্য একটু আতর, কয়েকটি শুষ্ক খেজুর; ইহা লইয়া কি করিতে হয় আমার জানা নাই~~ আমি অনাড়ির মত হাসিলাম ও বাটি হইতে আঙুলের আগায় একটু আতর তুলিয়া লইলাম মাত্র। মেয়েটিকে দু'একটি ভদ্রতাসূচক মিষ্টকথাও বলিলাম। মেয়েটি খালা আমার সামনে রাখিয়া চলিয়া গেল।
তারপর খাওয়ানোর ব্যবস্থা। নন্দলাল যে ঘটা করিয়া খাওয়াইবার ব্যবস্থা করিয়াছে, তাহা আমার ধারণা ছিল না। প্রকাণ্ড কাঠের পিড়ির আসন পাতা —সম্মুখে এমন আকারের একখানি পিতলের থালা আসিল, যাহাতে করিয়া আমাদের দেশে দুর্গাপূজার বড় নৈবেদ্য সাজায়। খালায় হাতীর কানের মত পুরী, বাথুয়া শাক ভাজা, পাকা শসার রায়, কাঁচা তেঁতুলের ঝোল, মহিষের দুধের দই, পেঁড়া। খাবার জিনিসের এমন অদ্ভুত যোগাযোগ কখনও দেখি নাই। আমায় দেখিবার জন্য উঠানে লোকে লোকারণ্য হইয়া গিয়াছে ও