একদিন জিজ্ঞাসা করিলাম-পাঁড়েজী, তোমার বাড়িতে আর কে আছে?
-সবাই আছে হুজুর, আমার তিন ছেলে, দুই লেড়কি, বিধবা বহিন।
-তাদের চলে কিসে?
রাজু আকাশের দিকে হাত তুলিয়া বলিল-ভগবান চালাচ্ছেন। তাদের দু-মুঠো খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব বলেই তো হুজুরের আশ্রয়ে এসে জমি নিয়েছি। জমিটা তৈরি করে ফেলতে পারলে-
-কিন্তু দু-বিঘে জমির ফসলে অতবড় একটা সংসার চলবে? আর তাই বা তুমি উঠে পড়ে চেষ্টা করছ কই?
রাজু কথার জবাব প্রথমটা দিল না। তারপর বলিল-জীবনের সময়টাই বড় কম হুজুর! জঙ্গল কাটতে গিয়ে কত কথা মনে পড়ে, বসে বসে ভাবি। এই যে বন-জঙ্গল দেখছেন, বড় ভালো জায়গা। ফুলের দল কত কাল থেকে ফুটছে আর পাখি ডাকছে, বাতাসের সঙ্গে মিলে দেবতারা পৃথিবীর মাটিতে পা দেন এখানে। টাকার লোভ, পাওনা-দেনার কাজ যেখানে চলে, সেখানকার বাতাস বিষিয়ে ওঠে! সেখানে ওঁরা থাকেন না। কাজেই এখানে দা-কুড়ুল হাতে করলেই দেবতারা এসে হাত থেকে কেড়ে নেন-কানে চুপি চুপি এমন কথা বলেন, যাতে বিষয়-সম্পত্তি থেকে মন অনেক দূরে চলে যায়।
দেখিলাম, রাজু কবি বটে, দার্শনিকও বটে।
বলিলাম-কিন্তু রাজু, দেবতারা এমন কথা বলেন না যে, বাড়িতে খরচ পাঠিও না, ছেলেপুলে উপোস করুক। ওসব কথাই নয় রাজু, কাজে লাগো। নইলে জমি কেড়ে নেব।
আরো কয়েক মাস গেল। রাজুর ওখানে মাঝে মাঝে যাই। ওকে কি ভালোই লাগে! সেই গভীর নির্জনে লবটুলিয়া বইহারের জঙ্গলে একা ছোট একটা ঘাসের খুপরিতে সে কেমন করিয়া দিনের পর দিন বাস করে, এ আমি ভাবিয়া উঠিতে পারি না।
সত্যকার সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোক রাজু। অন্য কোনো ফসল জন্মাইতে পারে