পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (চতুর্থ বর্ষ).pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় ১৩২০ । । প্রায়শ্চিত্ত । ২৩৫ বাঁ কিন্তু তাহার পরই হলাহলের ন্যায় তীব্র ও অগ্নির ন্যায় দহনকা তঁহার রসন । । রামতারণ স্মৃতিশাস্ত্রের অধ্যাপক ; তাহার টােল ছাত্রে পরিপূর্ণ। যদি কখন তাহার চরিত্রের তীব্র সমালোচনা তাহার কাছে কথা-প্রসঙ্গে উঠিত তিনি একটু হাসিয়া বলিতেন “কি জান, উপকার করা আমার স্বভাব। বেটারা আমার যে এত নিন্দ করে আবার ‘কারে প’ড়ে।' যখন পায়ে এসে ধরে তখন আর না বলতে পারি না। তবে একটু খতপত্র রেখে দিই। ; কি জানি পাছে আসল শুদ্ধ ফাকে পড়ি।” । শিষ্যরা তাহার শাস্ত্রব্যাখ্যা, সাংসারিক কুটবুদ্ধি, মোকৰ্দমা-মামলায় জয়লাভের ফন্দী ও অর্থে পাৰ্জন দেখিয়া দলে দলে তাহার টোলে আসিয়া টােল পরিপূর্ণ করিত। গ্রামে আর একজন পণ্ডিত ছিলেন। সন্ধিক্ষণে গম্ভীর সোমনাথের গম্ভীরতর ওঙ্কার শব্দ গঙ্গাতীর মুখরিত করিয়া যখন দিগন্ত প্লাবিত করিত · তখন কত নিরক্ষর কৃষকসন্তান গন্তব্য স্থানে যাইতে যাইতে রুদ্ধগতি হইয়া লুদ্ধকর্ণে সেই শব্দমহিমা শ্রবণ করিত, মুগ্ধনেত্রে সেই স্নিগ্ধ মূর্ত্তির পানে চাহিয়া থাকিত। স্তবাবসানে ভক্তিপূর্ণ প্রণাম করিয়া কেহ কেহ বা তঁহাকে দুই একটি প্রশ্ন করিত ; অপরে স্মিতমুখে চলিয়া যাইত। কিন্তু রামতারণ পণ্ডিতমহাশয় ও তাহার দলের নিকট সোমনাথের প্রতিপত্তি ছিল না। সোমনাথের উচ্চকণ্ঠে ওঙ্কারধ্বনি ব্রাহ্মণেতার জাতির কর্ণে প্রবেশ করায় সেই ক্ষুদ্র গ্রামে আর্য্যধর্ম্ম রাহুগ্রস্ত হইয়া উঠিল। তঁহার ‘অনার্য্য’ ব্যবহারের নিন্দ দিকে দিকে প্রচারিত হইল। এক দিন মাধ্যাহিকমান সমাধা করিয়া সোমনাথ আসিতেছেন ; পথিপাশ্বে শ্বপচনারী বিসূচিকারোগে দেহত্যাগ করিয়াছে, তাহার বিবর্ণ মুখে মক্ষিক উড়িয়া উড়িয়া বসিতেছে, তাহার বক্ষে স্তন্য-পায়ী শিশু, মাতার পীযুষ বৃথা অন্বেষণ করিতে করিতে অবসন্ন, কঁাদিবার সামর্থ্য পর্য্যন্ত শিশুর লুপ্তপ্রায় ; মাংসলোলুপ বায়স তাহার পৃষ্ঠে কঠোর চঞ্চুর আঘাত করিতেছে ; শ্মশানকুকুর নিকটে দাড়াইয়। দংশনে উদ্যত ; দ্বিধা সঙ্কোচ শৃন্ত হইয়া সহজ প্রফুল্ল বাদনে সেই সদ্যস্নাত সিক্তবাস ব্রাহ্মণ, ভগবানের আশীর্ব্বাদতুল্য বাহু যুগল বিস্তুত করিয়া মলমূত্রপরিপ্লাত চণ্ডালশিশুকে বক্ষে তুলিয়া লইলেন ; গৃহে লইয়া তপ্ত দুগ্ধে তাহার জীবন রক্ষা করিয়া পুনরায় স্নান -