পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (তৃতীয় বর্ষ - প্রথম খণ্ড).pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ, ১৩১৯ । পাযাণের কথা । G বৃদ্ধের জিহবাগ্রে অধিষ্ঠান করিতেছিল। সময় বুঝিয়া কূটবুদ্ধি, ভীরু, কাপুরুষ ব্রাহ্মণগণ কিরূপে ধীরে ধীরে উত্তরাপথের নানাদেশে শীর্ষ উত্তোলন করিতেছিল বৃদ্ধ তাহ অবগত ছিলেন । লিচ্ছবীি বংশের দৌহিত্র সন্তান হইয়াও সমুদ্র গুপ্ত গোপনে সদ্ধর্ম্মের কতদূর অনিষ্টসাধন করিয়াছিলেন বৃদ্ধ তাহার বিশেষ বিবরণ জানিতেন । কিরূপে গুপ্তবংশীয় সম্রাটগণের সহায়তায় ব্রাহ্মণগণ উত্তরাপথে পুনরায় মুখ প্রদৰ্শন করিতে সক্ষম হইয়াছিল, কিরূপে ব্রাহ্মণগণের প্রতি আন্তরক ঘূণা সত্বেও *উত্তরাপথব্যাসিগণ রাজভয়ে পুনরায় ব্রাহ্মণদিগের পদানত হইয়াছিল, আত্মবিচ্ছেদে দুর্বল বৌদ্ধসঙ্ঘ কিরূপে ব্রাহ্মণদিগের প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতায় পাতিত হইয়াছিল। তাহা বর্ণনা করিতে করিতে বৃদ্ধ আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিতেন। অবশেষে কুমার গুপ্ত ও স্কন্দ গুপ্তের রাজত্বকালে কিরূপে ব্রাহ্মণগণ রাজবলে বলীয়ান হইয়া আপনাদিগকে ভিক্ষু ও শ্রমণগণের সমকক্ষ বলিয়া পরিচয় দিতেন সে কথা বলিতে বলিতে বৃদ্ধের নয়নদ্বয় প্রদীপ্ত হইয়া উঠিত । দীর্ঘকাল ব্রাহ্মণদ্বেষী বৌদ্ধের সহবাসে অবস্থান করিয়া ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মাবলম্বী যুবকও ব্রাহ্মণদ্বেষী হইয়া উঠিলেন। উভয়ে এইরূপে আমাদিগের নিকট দীর্ঘকাল অতিবাহিত করিয়াছিলেন। এক দিন প্রভাতে যুবক বুঝিতে পারিলেন যে, তঁহাদিগের বিচ্ছেদের সময় সন্নিকট হইয়াছে ; স্থবির শীঘ্রই জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করিয়া নূতনের অন্বেষণে মহাযাত্রা করিবেন, যুবকের হৃদয় চঞ্চল হইয়া উঠিল। সে দিন আসিল ; বৃদ্ধের দুর্বল হৃৎপিণ্ড বহু চেষ্টা করিয়াও পর্য্যাপ্ত পরিমাণ শ্বাস আহরণে অসমর্থ হইল, জীর্ণ পঞ্জর যথাসাধ্য চেষ্টা করি।- য়াও হৃৎপিণ্ডের সহায়তা করিতে সমর্থ হইল না ; ধীরে ধীরে বুদ্ধের ক্লান্ত দেহ সুষুপ্তির আশ্রয় গ্রহণ করিল। যুবক শূন্য হৃদয়ে শূন্য দেহের পার্শ্বে বসিয়া মহাশূন্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে করিতে দিনাতিপাত করিলেন। শূন্যভারাক্রান্ত হৃদয়ে বৃদ্ধের লঘুভার দেহ মৃত্তিকায় প্রোথিত করিয়া ধীরে ধীরে অতি সন্তৰ্পণে জীর্ণ পর্ণকুটীরের জীর্ণ দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া যুবক স্তুপসন্নিধান হইতে প্রস্থান করিলেন । তাহার পর বহুদিন মনুষ্য দেখি নাই। স্তুপের ধ্বংসাবশেষ লতাগুদ্ষ্মে আচ্ছন্ন হইয়া গেল, গ্রীষ্মের পর গ্রীষ্মে প্রবল বায়ু জীর্ণ কুটীরের আচ্ছাদনতৃণ হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে, বর্ষার পর বর্ষা আসিয়া কুটীরের প্রাচীন কাষ্ঠদণ্ডগুলিকে প্রাচীনতর করিয়াছে। বসন্তে কুটীরের জীর্ণপঞ্জর শ্যামল তুণে ও নবীন