পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৩৭ ]

বিশেষ রকমে বৃদ্ধি হইত, এ কারণ বালকদিগের যে লঘু পাপে গুরু দণ্ড হইত তাহার আশ্চর্য্য কি? গুরুমহাশয়ের পাঠশালাটি প্রায় যমালয়ের ন্যায় —সর্ব্বদাই চটাপট্‌, পটাপট্‌, গেলুম্‌রে, মলুম্‌রে, ও “গুরুমহাশয়২ তোমার পড়ো হাজির” এই শব্দই হইত আর কাহার নাকখত —কাহার কানমলা —কেহ ইটেখাড়া —কাহার হাতছড়ি —কাহাকেও কপিকলে লট্‌কান—কাহার জলবিচাটি একটা না একটা প্রকার দণ্ড অনবরতই হইত।

 সোণাগাজির গুমর কেবল গুরুমহাশয়ের দ্বারাই রাখা হইয়াছিল। কিঞ্চিৎ প্রান্তভাগে দুই এক জন বাউল থাকিত —তাহারা সমস্ত দিন ভিক্ষা করিত। সন্ধ্যার পর পরিশ্রমে আক্লান্ত হইয়া শুয়ে২ মৃদুস্বরে গান করিত। সোণাগাজির এইরূপ অবস্থা ছিল। মতিলালের শুভাগমনাবধি সোণাগাজির কপাল ফিরিয়া গেল। একেবারে “ঘোড়ার চিঁহিঁ, তবলার চাটি, লুচি পুরির খচাখচ”, উল্লাসের কড়াংধুম রাতদিন হইতে লাগিল আর মণ্ডা-মিঠাই, গোলাপ ফুলের আতর ও চরস, গাঁজা, মদের ছড়াছড়ি দেখিয়া অনেকেই গড়াগড়ি দিতে আরম্ভ করিল। কলিকাতার লোক চেনা ভার —অনেকেই বর্ণচোরা আঁব। তাহাদিগের প্রথম এক রকম মূর্ত্তি দেখা যায় পরে আর এক মূর্ত্তি প্রকাশ হয়। ইহার মূল টাকা —টাকার খাতিরেই অনেক ফের ফার হয়। মনুষ্যের দুর্বল স্বভাব হেতুই ধনকে অসাধারণরূপে পূজা করে। যদি লোকে শুনে যে অমুকের এত টাকা আছে তবে কি প্রকারে তাহার অনুগ্রহের পাত্র হইবে এই চেষ্টা কায়মনোবাক্যে করে ও তজ্জন্য যাহা বলিতে বা করিতে হয় তাহাতে কিছুমাত্র ক্রটি করে না। এই কারণে মতিলালের নিকট নানা রকম লোক আসিতে