পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৫৪ ]

সেলামি দিতে পারিব না —কেহ বলে আমার জোতের জমি হাল জরিপে কম হইয়াছে —আমার খাজানা মুসমা দেও, তা না হয় তো পরতাল করে দেখো —মতিলাল এ সকল কথার বিন্দু বিসর্গ না বুঝিয়া চিত্র পুত্তলিকার ন্যায় বসিয়া থাকিলেন। সঙ্গি বাবুরা দুই একটা আন্‌খা শব্দ লইয়া রঙ্গ করত খিল্‌২ হাসিয়া কাছারি বাটী ছেয়ে দিতে লাগিল ও মধ্যে২ “উড়ে যায় পাখী তার পাখা গুণি” গান করিতে লাগিল। নায়েব একেবারে কাষ্ঠ, প্রজারা মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল।

 যেখানে মনিব চৌকস, সেখানে চাকরের কারিকুরি বড় চলে না। নায়েব মতিলালকে গোমুর্খ দেখিয়া নিজমূর্ত্তি ক্রমে২ প্রকাশ করিতে লাগিল। অনেক মামলা উপস্থিত হইল, বাবু তাহার ভিতর কিছুই প্রবেশ করিতে পারিলেন না, নায়েব তাঁহার চক্ষে ধুলা দিয়া আপন ইষ্ট সিদ্ধ করিতে লাগিল আর প্রজারাও জানিল যে বাবুর সহিত দেখা করা কেবল অরণ্যে রোদন করা —নায়েবই সর্ব্বময় কর্তা!

 যশোহরে নীলকরের জুলুম অতিশয় বৃদ্ধি হইয়াছে। প্রজারা নীল বুনিতে ইচ্ছুক নহে কারণ ধান্যাদি বোনাতে অধিক লাভ, আর যিনি নীলকরের কুঠিতে যাইয়া একবার দাদন লইয়াছেন, তাহার দফা একেবারে রফা হয়। প্রজারা প্রাণপণে নীল আবাদ করিয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করে বটে কিন্তু হিসাবের লাঙ্গুল বৎসর২ বৃদ্ধি হয় ও কুঠেলের গমস্তা ও অন্যান্য কারপরদাজের পেট অল্পে পূরে না। এই জন্য যে প্রজা একবার নীলকরের দাদনের সুধামৃত পান করিয়াছে সে আর প্রাণান্তে কুঠির মুখো হইতে চায় না কিন্তু নীলকরের নীল না তৈয়ার হইলে ভারি বিপত্তি। সম্বৎসর কলিকাতার কোন না কোন সৌদাগরের কুঠি হইতে টাকা