পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৮৬ ]

আনুপূর্ব্বিক আপন পরিচয় দিয়া কহিলেন —মহাশয়! আপনাকে অতি বিজ্ঞ দেখিতেছি —আমি আপনার দাস হইলাম —আমাকে কিঞ্চিৎ সদুপদেশ দিউন। সেই প্রাচীন পুরুষ বলিলেন— দেখিতেছি তুমি ক্ষুধার্ত্ত— কিঞ্চিৎ আহার ও বিশ্রাম কর পরে সকল কথাবার্ত্তা হইবে। সে দিবস আতিথ্যে গেল—সেই প্রাচীন পুরুষ মতিলালের সরল চিত্ত দেখিয়া তুষ্ট হইলেন। মানব স্বভাব এই যে পরস্পরের প্রতি সন্তোষ না জন্মিলে মন খোলাখুলি হয় না, প্রথম আলাপেই যদি এমত তুষ্টি জন্মে তাহা হইলে পরস্পরের মনের কথা শীঘ্রই ব্যক্ত হয়, আর একজন সারল্য প্রকাশ করিলে অন্য ব্যক্তি অতিশয় কপট না হইলে কখনই কপটতা প্রকাশ করিতে পারে না। ঐ প্রাচীন পুরুষ অতি ধার্ম্মিক, মতিলালের সরলতায় তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে পুত্রবৎ স্নেহ করিতে লাগিলেন। অনন্তর পারমার্থিক বিষয়ে তাঁহার যে অভিপ্রায় ছিল তাহা ক্রমশঃ ব্যক্ত করিলেন। তিনি বারম্বার বলিলেন —বাবা! সকল ধর্ম্মের তাৎপর্য্য এই কায়মনোচিত্তে ভক্তি স্নেহ ও প্রেম প্রকাশপূর্ব্বক পরমেশ্বরের উপসনা করা, এই কথাটি সর্ব্বদা ধ্যান কর ও মন, বাক্য ও কর্ম্ম দ্বারা অভ্যাস কর। এই উপদেশটি তোমার মনে দৃঢ়রূপে বদ্ধমূল হইলেই মনের গতি একেবারে ফিরিয়া যাবে, তখন অন্যান্য ধর্ম্ম অনুষ্ঠান আপনা আপনি হইবে কিন্তু পরমেশ্বরের প্রেমার্থ মনের দ্বারা, বাক্যের দ্বারা ও কর্ম্মের দ্বারা সদা একরূপ থাকা অতি কঠিন —সংসারে রাগ, দ্বেষ, লোভ, মোহ ইত্যাদি রিপু সকল বিজাতীয় ব্যাঘাত করে এজন্য একাগ্রতা ও দৃঢ়তার অত্যন্ত আবশ্যক। মতিলাল উক্ত উপদেশ গ্রহণপূর্ব্বক মনের সহিত প্রতিদিন পরমেশ্বরের ধ্যান ও উপাসনায় রত এবং আত্মদোষানুসন্ধানে ও শোধনে সযত্ন হইলেন। কিছুকাল এইরূপ করাতে তাঁহার মনোমধ্যে জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তির উদয় হইল।