বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আলালের ঘরে দুলাল - টেকচাঁদ ঠাকুর (১৯৪৭).pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলালের ঘরের দুলাল
৯১

সম্প্রতি বিলাত হইতে আসিয়াছে তাহাকেই খাড়া করিয়া তাহারই মুৎসুদ্দি হইতে হইবে। সে লোকটি সৌদাগরি কর্ম্মে ঘুন।

 ঠকচাচা। মুইবি সাতে সাতে থাক্‌ব, মোকে আদালত, মাল, ফৌজদারি, সৌদাগরি কোন কামই ছাপা নাই। মোর শেনাবি এ সব ভাল সমজে। বাবু আপসোস এই যে মোর কারদানি এ নাগাদ নিদ যেতেচে—লেফিয়ে২ জাহের হল না। মুই চুপ করে থাকবার আদমি নয়—দোশমন পেলে তেনাকে জেপ্টে, কেমড়ে মেটিতে পেটিয়ে দি—সৌদাগরি কাম পেলে মুই রোস্তম জালের মাফিক চলব।

 মতিলাল। ঠকচাচা—শেনা কে?

 ঠকচাচা। শেনা তোমার ঠকচাচি—তেনার সেফত কি কর্‌ব? তেনার সুরত জেলেখাঁর মাফিক আর মালুম হয় ফেরেস্তার মাফিক বুজ সমজ।

 বাঞ্ছারাম। ও কথা। এখন থাকুক। জান সাহেবকে দশ পনরো হাজার টাকা সরবরাহ করিতে হইবে তাতে কিছুমাত্র জখম নাই। আমি স্থির করিয়াছি যে কোতলপুরের তালুকখানা বন্ধক দিলে ঐ টাকা পাওয়া যাইতে পারে—বন্ধকি লেখাপড়া আমাদিগের সাহেবের আফিসে করিয়া দিব—খরচ বড় হইবে না—আন্দাজ টাকা শ চার পাঁচের মধ্যে আর টাকা শ পাঁচেক মাহাজনের আমলা ফাম্‌লাকে দিতে হইবে। সে বেটারা পুন্‌কে শত্রু—একটা খোঁচা দিলে কর্ম্ম ভণ্ডুল করিতে পারে। সকল কর্ম্মেরই অষ্টম খষ্টম আগে মিটাইয়া নষ্ট কোষ্ঠী উদ্ধার করিতে হয়। আমি আর বড় বিলম্ব করিব না, ঠকচাচাকে লইয়া কলিকাতায় চলিলাম—আমার নানা বরাৎ—মাথায় আগুন জ্বল্‌ছে। বড়বাবু! তুমি তর্ক সিদ্ধান্ত দাদার কাছ থেকে একটা ভাল দিন দেখে শীঘ্র দুর্গা২ বলিয়া যাত্রা করিয়া একেবারে আমার সোনাগাজির দরুন বাটীতে উঠিবে। কলিকাতায় কিছু দিন অবস্থিতি করিতে হইবে তার পর এই বৈদ্যবাটীর ঘাটেতে যখন চাঁদ সদাগরের মতন সাত জাহাজ ধন লইয়া ফিরিয়া আসিয়া দামামা বাজাইয়া উঠিবে তখন আবাল, বৃদ্ধ, যুবতি, কুলকন্যা তোমার প্রত্যাগমনের কৌতুক দেখিয়া তোমাকে ধন্য২ করিবে। আহা! এমন দিন যেন শীঘ্র উদয় হয়! এই বলিয়া বাঞ্ছারাম ঠকচাচাকে লইয়া গমন করিলেন।

 মতিলাল আপন সঙ্গীদিগকে উপরোক্ত সকল কথা আনুপূর্ব্বিক বলিল। সঙ্গীরা শুনিয়া বগল বাজাইয়া নেচে উঠিল—তাহাদিগের রাতিব টানাটানির জন্য প্রায় বন্ধ। এক্ষণে সাবেক বরাদ্দ বাহাল হইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। তাড়াতাড়ি,