মুখাবলোকন করিয়া তাহাদিগের মধ্যে যাহার কম বয়েস তিনি একেবারে মায়াতে মুগ্ধ হইয়া মা মা বলিয়া ভূমিতে পড়িয়া গেলেন অন্য আর এক জন অধিক বয়স্ক ব্যক্তি দুঃখিনী মাতার চরণে প্রণাম করিয়া করজোড়ে বলিলেন—মা গো! দেখ কি? যে ভূমিতে পড়িয়াছে সে তোমার অঞ্চলের ধন—সে তোমার রাম,— আমার নাম বরদাপ্রসাদ বিশ্বাস। মাতা এই কথা শুনিবা মাত্রে মুখের কাপড় খুলিয়া বলিলেন—বাবা! তুমি কি বলিলে? এ অভাগিনীর কি এমন কপাল হবে? রামলাল চৈতন্য পাইয়া মায়ের চরণে মস্তক দিয়া নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন, জননী পুত্রের মস্তক ক্রোড়ে রাখিয়া অশ্রুপাত করিতে২ তাহার মুখাবলোকন করিয়া আপন তাপিত মনে সান্ত্বনাবারি সেচন করিতে লাগিলেন ও ভগিনী আপন অঞ্চল দিয়া ভ্রাতার চক্ষের জল ও গায়ের ধুলা পুঁছাইয়া দিয়া নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। এদিকে ঐ বুড়ী বাটীর মধ্যে বাবুকে না পাইয়া তাড়াতাড়ি বাগানে আসিয়া দেখে যে বাবু তাহার সমভিব্যাহারিণী প্রাচীনা স্ত্রীলোকের কোলে মস্তক দিয়া ভূমে শয়ন করিয়া আছেন—ও মা একি গো!—ওগো বাবুর কি ব্যারাম হইয়েছে? আমি কি কবিরাজ ডেকে আন্ব? বুড়ী এই বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। বরদাপ্রসাদ বাবু বলিলেন—স্থির হও—বাবুর পীড়া হয় নাই, এই যে দুইটি স্ত্রীলোক—এঁরা বাবুর মা ও ভগিনী। বুড়ী উত্তর করিল—বাবু! দুঃখী বলে কি ঠাট্টা কর্তে হয়? বাবু হলেন লক্ষ্মীপতি, আর এঁরা হল পথের কাঙ্গালিনী—আমার সঙ্গে এসে কেও হলেন মা কেও হলেন বোন—বোধ হয় এরা কামীখ্যার মেয়ে—ভেল্কিতে ভুলিয়েছে—বাবা! এমন মেয়েমানুষ কখন দেখি না—এদের জাদুকে গড় করি মা! বুড়ী এইরূপ বক্তে২ ত্যক্ত হইয়া চলিয়া গেল।
এখানে সকলে সুস্থির হইয়া বাটী আগমন করিলেন তথায় পুত্ত্রবধূকে ও সপত্নীকে দেখিয়া মাতার পরম সন্তোষ হইল, পরে আপনার আর২ পরিবারের কথা অবগত হইয়া বলিলেন, বাবা রাম! চল, বাটী যাই—আমার মতি কোথায়—তার জন্য মন বড় অস্থির হইতেছে। রামলাল পূর্ব্বেই বাটী যাওনের উদ্যোগ করিয়াছিলেন—নৌকাদি ঘাটে প্রস্তুত মাতার আজ্ঞানুসারে উত্তম দিন দেখাইয়া সকলকে লইয়া যাত্রা করিলেন—যাত্রাকালীন মথুরার যাবতীয় লোক ভেঙ্গে পড়িল—সহস্র২ চক্ষু বারিতে পরিপূর্ণ হইল—সহস্র২ বদন হইতে রামলালের গুণ কীর্ত্তন হইতে লাগিল—সহস্র২ কর তাঁহার আশীর্ব্বাদার্থ উত্থিত হইল। যে বুড়ী বিরক্ত হইয়া গিয়াছিল সে জোড়হাত করিয়া রামলালের মাতার নিকট