পাতা:আলোক-লতা - চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অত্যন্ত কঠিন হইয়া বাজিল, তার নিজের অপরাধ স্ত্রী ও মলিন দুজনের কাছেই তুল্য প্রবল হইয়া পড়িল। সঙ্কোচে অপ্রতিভ সনৎকে চমৎকৃত করিয়া শান্ত স্বল্পবাক্ মলিনা দৃপ্ত ভঙ্গীতে ফিরিয়া দাড়াইল এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সনৎকে বিদ্ধ করিয়া স্পষ্ট স্পষ্ট করিয়া বলি--অসহায় নিরাশ্রয় লােককে অপমান করা খুব সহজ, নয় ? আপনি জানেন আপনি মিথ্যা অপবাদে আমাকে অপমান কছেন । আর আমি যদি দোষী হইও তা হলে আপনি নিষ্কৃতি পান না। আপনার আচরণের লজ্জাকে জুতাে মেরে দূর করবার কষ্ট পেতে হবে না, সে নিজেই দূর হয়ে যাচ্ছে।

 এতদিনের সঙ্কোচে-কুষ্ঠিত লজ্জায়-মৃদু নম্রতায়-ললিত মলিনা আজ অপমানের আঘাতে মহীয়সী মহারাণীর মতন দেহ ঋজু মাথা উন্নত মুখ দৃপ্ত পদক্ষেপ দৃঢ় করিয়া সিড়ি নামিয়া চলিয়া গেল। সনতের তিরস্কারের তর্জন শুনিয়া রাবব ভয়ার্ত মুখে সিড়ির নীচে আসিয়া দাড়াইয়া ছিল। মলিনা নামিয়া আসিতেই সেও সঙ্গে সঙ্গে গিয়া গাড়ীতে চড়িল। মলিনার চক্ষু , উফ, মুখে জ্বালা। সে জটপাকানাে ভাবনার গােলকধাঁধায় পথ হারাইয়া ঘুরিয়া মরিতেছিল, নির্দিষ্ট কিছুই ভাবিবার মতন মনের অবস্থা তখন তার ছিল না।

( ৩১ )

 মলিনা চলিয়া গেলে সুবাসিনী লজ্জিত স্বামীর হাত ধরিয়া বলিল-

ঘরে এস।

 সনৎ সুবাসিনীর সঙ্গে-সঙ্গে ঘরে গিয়া সুবাসিনীর আকর্ষণে তারই পাশে কৌচে বসিয়া পড়িয়া মুখ অন্ধকার করিয়া রহিল, স্ত্রীর মুখের দিকে চাহিতে পারিল না। সুবাসিনী কোমল স্বরে বলিল—আমিই মলিনাকে ডেকে এনেছিলাম। একজন স্ত্রী বা পুরুষ দুজন পুরুষ বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে দুজনের কাছেই তার কর্তব্যহানি ঘটে, তার মনুষ্যত্বের ক্রটি