পাতা:আলোক-লতা - চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোক-লতা
৭৯

 যে কলিকাতায় মলিনা নাই সেখানে যাইতে সনতের মন সরিতেছিল না। কিন্তু সুবাসিনী স্বামীর মনের রহস্যের কিছুমাত্র সন্ধান না পাইয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া চুপ করিয়া রহিল।

 বিকাল বেলা সনতের টেলিগ্রামের জবাব আসিল, আরো একমাস ছুটি মঞ্জুর হইয়াছে।

 সুবাসিনী তাহা দেখিয়া খুসী হইল, এই দীর্ঘ এক মাস সমুদ্রের প্রমুক্ত সৌন্দর্যে অবগাহন করিয়া তার স্বামীর মনের সব ম্লানতা, সব বিষণ্ণতা ধৌত নির্ম্মুক্ত হইয়া যাইতে পারিবে।

 হঠাৎ সনৎ বলিয়া উঠিল—একমাস ত ছুটি পেলাম সুবাস, চলো তীর্থে তীর্থে বেড়িয়ে আসি।

 স্বামীর হঠাৎ তীর্থে ভক্তি হওয়ার মতন কোনো লক্ষণ সুবাসিনী ত এতদিন তার স্বামীর মধ্যে দেখে নাই। সে একটু আশ্চর্য হইয়াই বলিল—পথে পথে ঘোরবার মতন কাপড়-চোপড় ত সঙ্গে আনিনি।

 সনৎ বলিল—তবে চলল কল্‌কাতায় গিয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে তীর্থ-যাত্রা করা যাবে—এক জায়গায় বোসে ভালো লাগ্‌ছে না।

 সুবাসিনী বুঝিল যে তীর্থে মতি হওয়ার মতন বয়স ও প্রবৃত্তি না হইলেও অশান্ত মনকে বিশ্রাম না দিবার ইচ্ছাতেই তার স্বামীর এই তীর্থ-পর্যটনের আকিঞ্চন। কিন্তু সনতের মনের সবখানি জুড়িয়া বিরাজ করিতেছিল মলিনা, কোনো তীর্থের পাষাণ-দেবতা নয়; মলিন তার নূতন মুনিবের সঙ্গে তীর্থে তীর্থে ফিরিতেছে, যদি কোথাও হঠাৎ তাকে একটিবার দেখিতে পাওয়া যায় এই দুরাশাই সনতের মনকে তীর্থের পানে টানিতেছিল।

(১৪)

 পুটির প্রাণটা ইহলোক ও পরলোকের সন্ধিস্থলে সাত দিন ধরিয়া