পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
আলোর ফুলকি

কুঁকড়ো একটু খতমত খেয়ে গেলেন। বুঝলেন সোনালিয়া সহজে ভোলবার পাত্রী নয়। যে-কুঁকড়ো তাদের দিকে একটিবার ঘাড় হেলালে সাদি কালি গোলাপি গুলজারি সব মুরগিই আকাশের চাঁদ হাতে পায় মনে এমনি করে সেই জগৎবিখ্যাত কুঁকড়োকে মোনালি মুখের সামনে শুনিয়ে দিলে যে জগতের সবাই যাকে ভালোবাসে এমন কুঁকড়োয় তার দরকার নেই! সে বেছে বেছে সেই কুঁকড়োকে বিয়ে করবে যার নাম-যশ কিছুই থাকবে না; থাকবার মধ্যে থাকবে যার মনমোনালিয়া বনের টিয়া একমাত্র মুরগি।

 কুঁকড়ো খানিক চুপ করে থেকে বললেন, “একবার গোলাবাড়ির চার দিক দেখে আসবেন চলুন।” বলে তিনি সোনালিয়াকে খুব খাতির করে সব দেখাতে লাগলেন। প্রথমেই, যেটা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়লে সোনালিয়ার মুখে চোখে জল ছিটিয়ে কুঁকড়ো তাকে বাচিয়েছিলেন সেই টিনের গামলাটা আর যে কাঠের বাক্সটায় সোনালিয়াকে লুকিয়ে রেখে তন্মার চোখে ধুলো দিয়েছিলেন সেই ছটাে জিনিস দেখিয়ে বললেন, “এগুলো নতুন কিনা, কাজেই কুচ্ছিৎ; কিন্তু পুরোনো দেয়াল, ভাঙা বেড়া, ফাটা দরজা, পুরোনো ওই মুরগির ঘরটি আর কতকালের ওই লাঙল, ধানের মরাই আর ওই শেওলায় সবুজ খিড়কির হুয়োর আর পানাপুকুর আর ওই কুঞ্জলতার থোকা-থোকা ফুল, কী স্বন্দর এগুলি।”

 সোনালিয়া কোনোদিন তো ঘরকন্নার ব্যাপার দেখে নি, সে কেবলি কুঁকড়োকে শুধোতে লাগল, “এ-সব নতুন জিনিসের মধ্যে থাকায় কোনো ভয় নেই তো।” কুঁকড়ে তাকে বললেন, “আমরা বেশ নির্ভয়ে আছি— মোরগ মুরগি হাস এবং মানুষ। কেননা, এ-বাড়ির কর্তা— তিনি নিরামিষ খান, কাজেই আগু বাচ্ছা নিয়ে আমাদের মুখে থাকবার কোনো বাধা নেই। ওই দেখুন-না, বেড়াল পাচিলের উপর ঘুমিয়ে আছে, আর ঠিক তার নীচেই আমার সব-ছোটো বাচ্ছাটা খেলে বেড়াচ্ছে গাদা গাছটার তলায়।” ইতিমধ্যে চড়াইটা চট করে কখন চিনে-মুরগিকে সোনালিয়ার খবরটা দিয়ে ফুড়ৎ করে উঠোনে এসে বসল। সোনালিয়া শুধোলেন, “ইনি?” চড়াই অমনি উত্তর দিলে, “ইনি এইমাত্র চিনে-মুরগিকে আপনার শুভ আগমন জানিয়ে এলেন। তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলেন বলে।” কুঁকড়ো পরিচয় দিলেন, “ইনি তাল-চটকমশায়, সর্বদা কাজে ব্যস্ত।” সোনালিয়া শুধোলে, “কী কাজ।”