পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
আলোর ফুলকি

 সোনালি চড়াই-এর হেঁয়ালির অর্থ বুঝলে না; সে পরিষ্কার জবাব চাইলে। চড়াই বললে, “অন্ধকার বেশ ঘুটঘুটে আর পেঁচাগুলোও বেশ মোটা-সোটা দেখলেম।”

 “তারা তাকে মারবার যুক্তি করলে?” সোনালি শোধালে।

 “না, মারবার নয় তাকে পরলোকে পাঠাবার যুক্তি।” বলে চড়াই সোনালিকে আশ্বাস দিয়ে বললে, “তবু কতকটা রক্ষে, কী বলে।” সোনালি কি বলতে যাচ্ছিল, চড়াই বললে, “ভাবছ কেন, শেষ দাড়াবে যা তা ফক্কাঃ, বুঝলে।” সোনালি ভয়ে ভয়ে বললে, “যাই বল কিন্তু পেচারা তো সহজ পাখি নয়।”

 চড়াই হেসে বললে, “কিন্তু তাদের যুক্তিটা মোটেই ভয়ানক নয়। আরো অনেক যুক্তি তারা এটেছে আঁটবেও। পেচাগুলো যদি সহজ পাখি হত তবে ঘুট না করে খাবার ঘুটেই তারা বেড়াত। কিন্তু তাদের ভুরু চোখের উপরে, নীচে, আশে পাশে, আর চোখগুলো দেখেছ তো? মনে হয় যেন পাহারোলার লণ্ঠন, খোলো আর বন্ধ করে। আর ঠোঁট তো দেখেছ?” বলেই চড়াই “ছিঃ ছিঃ” বলে ডানা ঝাড়া দিয়ে বললে, “তুমি কিছু ভেবে। না সোনালি। সব ঠিক হবে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা চাই, বুঝলে কিনা।”

 সোনালি চড়াই-এর হেঁয়ালি বড়ো একটা বুঝলে না কিন্তু কুঁকড়োর পুরনো বন্ধু হয়ে চড়াই এখনো যখন হাসিতামাশা করছে তখন ভয়ের কারণ খুবই কম এটা তার মনে হল। “কিন্তু তবু কী জানি, কুঁকড়োকে সব কথা জানানো ভালো।” ব’লে সোনালি গোলাবাড়ির দিকে যাবে, চড়াই তাকে তাড়াতাড়ি পথ আগলে বললে, “অমন কাজটি কোরো না, যদি-বা কুঁকড়ে সেখানে না যান, এই ঘোটের কথা শুনলে নিশ্চয়ই যাবেন, আর তা হলে লড়াই বাধবেই।” সোনালি চড়ায়ের কথা রাখলে। চড়াই যখন তার পুরনো বন্ধু, তখন তারি পরামর্শমত কাজ করাই ঠিক। সোনালি যাচ্ছিল, ফিরে এল।

 ওদিক থেকে শব্দ এল, “গা তো ল।” চড়াই আর সোনালি ফিরে দেখলে কুঁকড়ে আসছেন। কুঁকড়ে হাক দিলেন, “কো-উ-ন হ্যায়।”  সোনালি মিহিমুরে উত্তর দিলে, “সো-না-লি-য়া”, কুঁকড়ে শোধালেন, “ওখানে আর কেউ আছে কি।” সোনালি চড়াইকে চোখ টিপে বললে, “না মশায়।” ঘোঁটের কথা কুঁকড়োকে