পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৪৯

শক্র হাসাবে না? সোনালি, তুমি আমাকে যাই ভাব-না কেন, আমি জানি এই স্বর্গে মর্তে আলো দেবার ভার নেবার উপযুক্ত পাত্র আমি নই, এত পাখি থাকতে অতি তুচ্ছ সামান্ত পাখি আমার উপর অন্ধকারকে দূর করবার ভার পড়ল? কত ছোটো, কত ছোটো আমি, আর এই জগৎজোড়া সকালের আলো সে কী আশ্চর্যরকম বড়ো, কী অপার তার বিস্তার। প্রতিদিন সকালে আলো বিলিয়ে যখন দাড়াই তখন মনে হয়, একেবারে ফকির হয়ে গেছি। আমি যে আবার কোনোদিন এতটুকুও আলো দিতে পারব তার আশাটুকুও থাকে না। সোনালি শুনলে যেন কুঁকড়োর কথা চোখের জলে ভিজে ভিজে, সে তাঁর খুব কাছে গিয়ে বললে, “মরি মরি।” কুঁকড়ো সোনালির মুখ চেয়ে বললেন, “আঃ সোনাল, যে আশা-নিরাশার মধ্যে আমার বুক নিয়ত তুলছে তার যে কী জ্বালা কেমন করে বলি। গান গাইতে হবে, আলোও জ্বালাতে হবে, কিন্তু কাল যখন আবার এইখানে দাড়িয়ে দশ আঙুলে আশার রাগিণী খুজে খুজে কেবলই মাটির বুকের তারে তারে টান দিতে থাকব, তখন হারানো সুর কি আবার ফিরে পাব, না দেখব, গান নেই গলা নেই আলো নেই তুমি নেই আমি নেই কিছু নেই? হারাই কি পাই, এরি বেদন মোচড় দিচ্ছে বুকের শিরে শিরে সোনালি। এই যে দো-টানায় মন আমার তুলছে এর যন্ত্রণা কে বুঝবে। রাজহাস যখন রসাতলের দিকে গলাটি ডুবিয়ে দেয়, সে নিশ্চয় জানে, পদ্মের নাল তার জন্তে ঠিক করা রয়েছে জলের নীচে, বাজপাখি যখন মেঘের উপর থেকে আপনাকে ছুড়ে ফেলে মাটির দিকে তখন সেও জানে ঠিক গিয়ে সে যেটা চায় সেই শিকারের উপরেই পড়বে, আর সোনালি তুমিও জান বনের মধ্যে উই পোকা আর পিপড়ের বাসার সন্ধান পেতে তোমায় এতটুকুও ভাবতে হয় না, কিন্তু আমার এ কী বিষম ডাক দেওয়া কাজ। কাল যে কী হবে সেই দুঃস্বপ্নই বয়ে বেড়াচ্ছি, আজকের ডাক আজকের সাড়া কাল আবার দেবে কি না প্রাণ, গান গাব কি না ফিরে আর-একবার, তাই ভাবছি সোনালিয়া।”

 সোনালি কুঁকড়োকে আপনার ডানার মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললে, “নিশ্চয়ই কাল তুমি গান ফিরে পাবে গল। ফিরে পাবে, আলোর সুর মাটির ভালোবাসা আবার সাড়া দেবে তোমার বুকের মধ্যে।”