পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আলোর ফুলকি
৫৩

 চড়াই বললে,“গামলায় গর্তটা এমন ছোটো যে সেখান থেকে আমি কেবল একটুখানি মাটি আর তোমার ওইহলুদবরন চরণ-কুখানি দেখেছিলেম,আকাশটাকোথায়, তা খবরেও আসে নি।”

 কুঁকড়োবললেন, “তোমার জন্য আমার ছঃখু হয়, আলোর মর্ম বুঝলে না, তুমি যে তিমিরে সেই তিমিরেই থাকে। অত্যন্ত চালাক পাখি।”

 চড়াই জবাব দিলে, “বেশ কথা, অতি বিখ্যাত কুঁকড়ে।”

 কুঁকড়ো বললেন,“বেশ কথা, যে থাকবার থাক, আমি যেমন চলেছি সূর্যের দিকে মুখ রেখে তেমনিই চলি দিনরাত এই পাখি-জন্ম সার্থক ক’রে নিয়ে। চড়াই জান, বেঁচে সুখ কেন তা জান?”

 চড়াই ভয় পেয়ে বললে, “তত্ত্বকথা এসে পড়ল শুনেই মনে হয় পিপড়ের পালক ওঠে মরিবার তরে”, ব’লে চড়াই নিজের পালক খুটতে লাগল। কিন্তু কুঁকড়ে বলে চললেন, “কিছুর জন্যে যদি চেষ্টা না করব তবে বেঁচেই থাকা বৃথা, বড়ো হবার চেষ্টাই হচ্ছে জীবনের মূল কথা, তুই চড়াই সবার সব চেষ্টাকে উড়িয়ে দিতে চাস, সেইজন্যে তোকে আমি ঘৃণা করি, এই যে এতটুকু গোলাপী পোকাটি এক মস্ত ওই গাছের গুড়িটাকে রুপোর জাল দিয়ে গিল্টি করতে চাচ্ছে, ওকে আমি বাস্তবিকইভান্ধা করি।” “আর আমি ওকে টুপ করে গালে ভরি” বলেই চড়াই পোকাটিকে ভক্ষণ করলেন। “তোর কি দয়া-মায়া নেই রে। যাঃ, তোর মুখ দেখব না” বলে কুঁকড়ো চললেন। চড়াই বললে, “দয়া-মায়া নেই কিন্তু ঘটে আমার বুদ্ধি আছে, যা হোক আমি আর তোমার কিছুতে নেই তোমার শত্রুরা যা-ইচ্ছে করুক বাপু, আমার সে কথায় কাজ কী, তুমি জান আর তারা জানে।”

 কুঁকড়ো শোধালেন, “শক্র কারা শুনি?”

 “কেন, পেচার।” চড়াইট বলে উঠল।

 “শেষ এও ভাগ্যে ছিল, পেচা হলেন শত্রু আমার, হাঃ হাঃ হাঃ” ব’লে কুঁকড়ো হেসে উঠলেন।

 চড়াই বললে, “আলোর কাছে তারা এগোতে পারে না বটে, সেইজন্যে তারা এক বাজখাই গুগু জোগাড় করেছে, যে পাখি রোজই দিন গুনছে তাকে জবাই করতে।”