পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আলোর ফুলকি
৫৯

 কুলতলাটা কুটিতে, পালকে,চাপদাড়ি, গোঁপ, টিকি আর পোষা-পালাবড়ে বড়ো খেতাবজাইগীর শিরপেচওয়াল মোরগের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠল, যেন পালকের গদী। কারুলেজের পালক, মেপে সাতগজ। কারু গলায় যেন উলের গলাবন্ধ জড়ানো রয়েছে। একজনের কুটির কেতা যেন রামছাগলের শিং। কারু মাথায় জরির তাজ, কারু এক চোখে চশমা, অন্ত চোখটা টুপিতে ঢাকা; কারু বুকে ফুলের তোড়ার মতো খানিক পালক, কারু অঞ্জল দস্তানায়মোড়, কারু-বা আণ্ডল এত লম্বা যে কিছুই ধরতে পারে না। কেউ বাকড় চুলের উপরে আবারটিকি রেখেছে, আর কারু-বা মাথায় চুলও নেই, টিকিও নেই, কিছুই নেই। ঘাড়ে-গর্দানে-সমান এই শেষের মোরগট হচ্ছে সেই নামজাদা লড়ায়ে মোরগ, যে বিলেত পর্যন্ত মেরে এসেছে। এরি ছুপায়ে ইস্পাতের র্কাট-মারা ভয়ংকর ঘটে কাতান মানুষ শখ করে বেঁধে দিয়েছে, অন্য মোরগকে লড়ায়ে খুন ক’রে বাজি জেতবার আর মজা দেখবার জন্যে। ঘোড়দৌড়ের খেলায় যেমন, তেমনি এই মোরগের লড়াই দেখতে আর বাজি লাগাতে লোকে টিকিট পায় না, এত ভিড় হয়।

 বেরাল চড়াইকে গাছের উপর থেকে এই মোরগটাকে দেখিয়ে বললে, “এই সেই বাজখাই গুণ্ডা বা লড়ায়ে মোরগ বা নবাব বাজেখার বাবুর্জিখানার শেষ-পোষা পাখি। পুরুষানুক্রমে এদের ঘাড় এমন শক্ত যে মোটেই নোয় না, ইনি খালি দিল্লীর লাড্ডু খেয়ে লড়েন।”

 এইবার সব বিলেত-ফেরত মোরগ এলেন, “মিস্টার চচ্চড়ি, মিঃ ভাজি,মিঃ ঘণ্ট, মিঃ আবার খাব, মিঃ চাপাটি,মিঃবে-হোস।” চিনি-দিদি ভাবছেন এই-সব মোরগের মুরগিদের নিয়ে আসছেবারে তিনি একটা পর্দাপার্টি দেবেন। দাড়কাকতখনো হাপাতে হাপাতে ফুকরোচ্ছে, “রামধনুস, রঙবেরঙ, বুঁদেলা মল, রণছোড় ভাগি, ধান ভগৎজিউ.” যত মাড়োয়ার দেশের মোরগ, সিন্দি কচ্ছি, অরোদ-বরোদ সবাই এলে পর দাড়কাক মুখ ফিরিয়ে দেখলে— কুঁকড়ো। সে তার পদবী উপাধি ফুকরোতে যাবে, কুঁকড়ো বললেন, “কিছু দরকার নেই। শুধু জানিয়ে দাও আমি কুঁকড়ো এলেম।” দাড়কাক তার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে মুখটা বেঁকিয়ে জোরে হাক দিলে, “কুঁকড়ো -ও-ও।” কুঁকড়ো অতি শাস্ত ভালোমানুষটির মতো চিনি-দিদিকে নমস্কার করে বললেন, “আমাকে মাপ করতে হবে, আমার সাজসজ্জা পদবী উপাধি কিছুই নেই,আমার ঠিক যতগুলো আঙুল হওয়া উচিত তাই আছে, আর মাথার এই লাল একটিমাত্র টুপি, জন্মাবধি