পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৭১

কুলতলার নিষ্কর্মার দল! এই সবজি-বাগান হাওয়া খাবার জায়গাও নয়, গুলতোন করবার আডডাও নয়, এখানে কাজ চলেছে, ফুল থেকে ফল আস্তে-আস্তে তৈরি হচ্ছে, হট্টগোলের জায়গা এটা নয়, ওই শোনো মৌমাছিরাও এই কথাই বলছে।” অমনি সব মৌমাছি ব’লে উঠল, “কাজের সময়, সরো না মশয়! সরো না মশয়! এসো না মশয়! এসো না মশয়।”

 তার পর মুরগিদের ডেকে কুঁকড়ো বললেন, “ওই-সব পোষা মোরগের পালক দেখে ভুলো না। ভুলো না। যে ধান ছড়ায় তারি কাছে ওরা ছুটে যায়, গোলাম বনে সেলাম বাজায়। ওদের সবখানিই মিথ্যে দিয়ে গড়, সত্যির মধ্যে কেবল ওদের পেটটি। আর ময়ুর তোমাকে বলি, দেব-সেনাপতির বাহন ব’লে বিধাতা তোমায় ভালো সাজ দিয়েছেন কিন্তু তাই ব’লে সাহস বলে জিনিস তোমায় একটুও তিনি দেন নি; দিয়েছেন তোমার বুকের মধ্যে হিংসে আর দেমাকের বিষ এমনি ভাবে যে তোমার গলার খানিক পালক পুড়ে কালি হয়ে গেছে; আর তোমার ল্যাজের ডগাটি পর্যন্ত হয়ে গেছে নীল, পাছে কারু বাড় দেখতে হয় সেই ভয়ে।”

 চড়াই অমনি ব’লে উঠল, “ছুট।”

 কুঁকড়ো চড়ায়ের দিকে ফিরে বললেন, “কী কুক্ষণে শহুরে চড়ায়ের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছিল বনের তাল চড়াই, সেই থেকে কেবলই তুমি ভয়ে-ভয়ে আছ, পাছে কেউ তোমার শহুরে খোলস খুলে নেয়। নকল-শহুরে। তোমার চলন নিজের নয়, বলন নিজের নয়, কেননা তোমার আনন্দ নেই, আছে কেবল ধরা-পড়বার ভয়। তুমি নিজেকে পছন্দ কর না কাজেই অন্তকেও ভালোবাস না। তোমার কী নাম দের? তুমি জলন্ত সলতের পোড়া গুল, তোমাকে র্কাচি দিয়ে ছেটে দেওয়াই দরকার।”

 চিনি-দিদি ব’লে উঠলেন, “বেশ বেশ।”

 চড়াইট ল্যাজ-গুড়িয়ে এক কোণে সরে পড়ল, আর পেরুর উপরে এই অপমানের ঝালট ঝাড়তে গেলে কোনো বিপদে পড়বে কি না সেটা মনে মনে বিচার করতে লাগল। ঠিক এই সময় দূর থেকে চিড়িয়াখানার মালিক ডাক দিলেন, “আয়—আঃ—আয় আঃ!” অমনি সব পোশাকী মোরগ সেই দিকে দৌড় দিলে।