পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৭৩

 কত রকমের পাখি গাছে গাছে। কাঠবেরালি সব বাদাম-গাছের ডালে-ডালে লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে; খরগোস ঘাসের মধ্যে লুকোচুরি আর কপাটি খেলছে। বনে এসেই খরগোসগুলোর সঙ্গে কুঁকড়োর ভাব হয়ে গেল; কিন্তু তারা ফ্যাল-ফ্যাল ক'রে চেয়ে থাকে,সোনালিয়া সেট সইতে পারে না; এক-একদিন কুঁকড়োর আড়ালে ডানার ঝাপটা দিয়ে তাদের ভয় দেখাতে ছাড়ে না।

 একটা কাঠঠোকরার সঙ্গে কুঁকড়োর খুব জমে গেল। অশোক-গাছটার পাশেই একটা কাঠাল গাছে তার কোটর। দিনের মধ্যে দশবার সে কুঁকড়োর সঙ্গে গল্প করতে এসে হাজির হয়। সোনালিয়। কিন্তু এটা ভারি অপছন্দ করে; সময় নেই, অসময় নেই, এলেই হল? শেষে কাঠঠোকরার সঙ্গে বন্দোবস্ত হল, আসবার আগে সে তিনবার ঠকঠক আওয়াজ দিয়ে তবে অগসবে।

 কিন্তু কাঠঠোকরার গল্প শুনতে কুঁকড়ো সত্যি ভালোবাসেন; সে যে কত কালের সব পাখিদের কথা জানে, তার ঠিক নেই।

 একদিন সন্ধেবেলা কাঠঠোকরা কুঁকড়োকে সন্ধ্যা-পাখির গান শোনালে। সে অতি চমৎকার। দুটি টুনটুনি স্বর ধরলে আর বনের সব পাখি তাদের গানে আস্তে আস্তে যোগ দিলে। প্রথম পাখিটি গাইলে, “ও আমাদের বন্ধু।” জুড়ি-টুনটুনিটি অমনি ধরলে, “ও অনাথের নাথ!” হাজার হাজার পাখির মিষ্টি স্বর অমনি গাছে গাছে সাড়া দিলে, “ওগো বন্ধু। ওগো বন্ধু।” তারপরে বন্দন শুরু হল—

 “নমস্কার নমস্কার। আকাশে নমস্কার, আলোতে নমস্কার, আভাতে নমস্কার, বাতাসে নমস্কার, রাতে নমস্কার, দিনে নমস্কার— তোমাকে নমস্কার। তোমার দেওয়া চোখের আলো, তোমার দেওয়া মিষ্টি জল, তোমার এই ঘন বন, তোমার এই মধুফল, তোমার এই কাটার বেড়া, তোমার এই সবুজ ঘাস। মিষ্টি স্বর এও তোমার, তোমার এ নিশ্বাস। তোমার এই পাতার বাসা, তোমার এই ছোটো পাখি। আমার এই ছোটো সুরে তোমারেই আমি ডাকি।—ছোটো বাসার ছোটো পাখি— সন্ধ্যা হল তোমায় ডাকি, দিনের শেষে তোমায় ডাকি, বন্ধু এসো,তোমায় ডাকি।”

 এ পাখি থেকে ও পাখি, এ গাছ থেকে ও গাছ, এমনি ক’রে বনের শেষ পর্যন্ত “বন্ধু এসে।”

 ১০