পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
আলোর ফুলকি

ব’লে সবাই ডাক দিয়ে গেয়ে উঠল। কুঁকড়োও ডাক দিলেন, “বন্ধু বন্ধু!” তার পর একটি একটি করে সব ছোটে পাখির পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে পড়ল। দেখতে দেখতে চাদের আলো বনের ফাঁক দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ঝরনার মতো নেমে এল— লতাপাতার কিনারায়, পাথরের উপর, শেওলার গায়ে। কুঁকড়ো দেখলেন, একটুখানি মাকড়সার জালে হীরের মতে কী ঝলক দিচ্ছে। মনে হল, বুঝি একটা জোনাক-পোকা জালে পড়েছে। কাছে গিয়ে দেখেন, বিষ্টির একটি ফোটায় চাদের আলো এসে লেগেছে। এমনি সব নূতন-নূতন কত কী দেখতে দেখতে সেই মহাবনে কুঁকড়োর দিন আর রাতগুলি আনন্দে কাটছে।

 বনে ফিরে এসে কুঁকড়ো আবার তার গান ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু কেবল সকালের গানটি ছাড়া সোনালি তাকে আর-একটি গানও গাইতে দেবে না— তাও আবার সকালটা যদি সোনালির গায়ের পালকের চেয়েও রঙিন আর জমকালো হয়ে দেখা দেয় তবেই। কুঁকড়ো সোনালিকে বলেন, “এই আলোতেই আমাদের সেদিনের মিলন, সেটা ভুললে চলবে না সোনালি। আলোর জয় আমাকে দিতেই হবে সারাদিন।” সোনালি বলে, “তুমি আমার চেয়ে আলো-কে কেন ভালোবাসবে।”

 ইতিমধ্যে একদিন চকচকে সবুজ এক সোনাল-পাখির সঙ্গে সোনালির দেখাশুনো হয়েছে,আর গহন-বনের একটা নির্জন পথে ফুটিতে বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে এটা কুঁকড়োর চোখ এড়াল না। কিন্তু মনের দুঃখ মনেই রেখে কুঁকড়ো ভাবলেন, “আমি কি বলতে পারি, কেন তুমি সোনালকে বেশি পছন্দ করবে আমার চেয়ে সোনালি? আকাশ কি কোনোদিন তাতে-পোড়া পৃথিবীকে বলতে পারে— তুমি বিষ্টির ফোটাগুলিকে রোদের চেয়ে কেন ভালোবাসবে? না, মাটিই বলতে পারে আকাশকে— তুমি বিষ্টিকেই বরণ করে, আলো-কে চেয়ে না! সোনালিয়া, সে বনের তুলালী, অরণ্য তো তাকে আমার সঙ্গে বাইরে— দূরে পাঠাতে পারবে না; সে দূত পাঠিয়েছে ঘন বনের সবুজ সোনাল-পাখিটি; ওরি সঙ্গে কোনদিন চলে যাবে ঝরা ফুল ঝরা পাতার স্বপ্ন-বিছানো গহন-বনের অন্দরের পথে সোনার আঁচলে ঝিলিক দিয়ে সোনার পাখি। আর আমি” —বলে কুঁকড়ো নিশ্বাস ফেললেন।—“কাঠঠোকরা ঠিকই বলে, যেখানে যার বাসা, সেইখানেই তার ভালোবাসা। আমার সবই সেই পাহাড়তলির আকাশের নীচে