পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
আলোর ফুলকি

কুঁকড়ো তাকে দেখে বললেন, “জিন্ম, তুমি এখানে যে। শিকার পৌছে দিতে না কি।”

 জিন্মা ঘাড় হেঁট করে বললে, “এরা যে জোর করে আমায় শিকারে নিয়ে এল.।”

 কুঁকড়ো এতক্ষণ স্বপনপাখিটিকে আড়াল করে আগলে ছিলেন,এবার সরে দাড়িয়ে বললেন, “চেয়ে দেখো কাকে তারা মেরেছে।”

 জিম্মা ঘাড় নেড়ে বললে, “আহা যে গাছটি স্বরে ভরা দেখবে, সেই গাছেই কি আগে গুলি চালাবে রাক্ষসগুলো। আমি আবার এদের হুকুম মানব।”—ব’লে জিন্ম ঘুরে বসল। তার পর, মাটির মধ্যে সব কারা চলাফেরা করতে লাগল, আর দেখতে দেখতে স্বপনপাখিকে পৃথিবী যেন কোলের মধ্যে আস্তে আস্তে টেনে নিতে লাগলেন।

 দুরে শিকারীদের শিটি পড়ল। জিন্ম কুঁকড়োকে চটুপটু গোলাবাড়িতে ফিরে যেতে ব’লে দৌড়ে চলে গেল শিকারীদের দিকে। এদিকে সোনালি কেবল দেখছিল কখন সকাল হয়। তার ভয় হচ্ছিল বুঝি কুঁকড়ো এইবার আকাশে চেয়ে দেখেন। কিন্তু কুঁকড়ো যেমন মাথাহেঁট ক’রে স্বপনপাখির জন্যে র্কাদছিলেন, সেই ভাবেই রইলেন। সোনালি আস্তে আস্তে তাঁর কাছে নিয়ে বললে,“এসো, আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদো।” কুঁকড়ো নিশ্বাস ফেলে সোনালির কাছে সরে গেলেন, সে ডানায় তাকে ঢেকে নিলে। তার পর সেই সোনার ডানার মধ্যে ঢেকে সোনালি কত ভালোবাসাই জানাতে লাগল, কত মিষ্টি কথা, কত মিনতি, কত ছল। আরও দিকে সকাল হতে থাকল, অন্ধকার ফিকে হয়ে এল, সব জিনিস স্পষ্ট হতে থাকল। কিন্তু তখনো সোনালি বলছে, “দেখছ আমি তোমায় কী ভালোবাসি।” তার পর হঠাৎ এক সময় ডানা সরিয়ে নিয়ে সোনালি বলে উঠল পালক ঝাড়া দিয়ে, “দেখেছ, কেমন সকাল এসেছে, তুমি না ডাকতেই।”

 কুঁকড়ো চমকে আকাশে চাইলেন। তার পর বুক ফেটে তার এমন স্বর উঠল যে তেমন কান্না কোনোদিন কেউ শোনে নি। তিনি যেন পাষাণের মতো স্থির হয়ে গেলেন; আর চোখের সামনে তাঁর সকালের আলো মেঘে আকাশে গাছে ছড়িয়ে পড়তে থাকল।

 সোনালি নিষ্ঠুরের মতো বললে, “শেওলাগুলো রাঙা হয়ে উঠল বলে।” “না, কখনো না।” বলে সেদিকে কুঁকড়ো ছুটে যাবেন, দেখতে দেখতে পাথরের গায়ে শেওলার উপরে সকালের আভা পড়ল আর সেগুলো আগুনের মতো লাল হয়ে গেল। সোনালি বললে, “ওই দেখো