পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R R 8 আশুতোষ-স্মৃতিকথা দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেন —যিনি সময়ের এক মুহুর্ত্তও অপব্যয় করেন नशे,- ব্রাহ্মমুহূর্ত্তে শয্যাত্যাগ করিয়া যিনি পরহিত-কল্পে, একান্ত নিঃস্বার্থভাবে প্রতিপক্ষের নানা গ্লানি ও ষড়যন্ত্র সহ করিয়া কর্ম্মক্ষেত্রে মহাযোগীর অকুষ্ঠিতভাবে কাজ করিতেন ; যাহার বিশাল ভুজাশুয়ে কত দুঃখী, তাপী ও আর্ত্ত সাম্বন পাইয়াছে ; দাড়াইলে যাহাকে হিমাদ্রির ন্যায় অটল বলিয়া মনে হইত ; যিনি কথা বলিলে মনে হইত। গিরি-নিঃসৃত গৈরিক স্রাব ঝরিতেছে অথবা ইন্দ্র বীজ নিক্ষেপ করিতেছেন ; যিনি স্বীয় বৃহৎ চেয়ারে উপবেশন করিয়া কথোপকথন-কালে চাণক্য অথবা সক্রেটিসের মত উপদেষ্টারূপে প্রতীয়মান হইতেন ; উৎসব-গৃহে যিনি আনন্দের প্রদীপ-স্বরূপ ছিলেন ; র্যাহার অভাবে সূর্য্যহীন সৌর-মণ্ডলের ন্যায়। আর সমস্ত জ্যোতিষ্ক অস্তমিত হইত,-সেই নর-দেহে ভাগবত-শক্তির জীবন্ত প্রকাশ-বিপুল পুরুষের চির-নিদ্রায় মুদিতনেত্র মুখমণ্ডল দেখিয়া মনে হইল, মানুষ, তুমি যত বড়ই হও না কেন, তোমার কিসের গর্ব ? যাহার ইঙ্গিত ঐরাবত মণ-প্রমাণ খাদ্য খাইয়া বৃহৎ হইতেছে, এবং ক্ষুদ্র কীট কণা-প্রমাণ প্রসাদে তৃপ্ত হইয়া ছুটিতেছে, সেই সর্ব্বব্যাপী, সুমহান, বিশ্বের অনন্য-শারণ একমাত্র ভগবান ছাড়া জগদ্বাসীর আর কেহ আশ্রয় ও বন্দনীয় নহেন। র্তাহার শব্ব দেখিয়া কেহ উচ্চৈঃস্বরে কঁাদিতেছিলেন, কেহ কেহ আড়ষ্ট হইয়া দাড়াইয়াছিলেন, কেহ কেহ আক্ষেপ করিয়া বলিতেছিলেন,-“বাঙ্গলদেশের শিক্ষা রসাতলে গেল।” সে দিনও তিনি দ্বারভাঙ্গা-ভবনে কত গুরুতর কার্য্য করিয়া গিয়াছেন ; পাটনা যাইবার দিনেও তঁহাস গৃহে বন্ধু-বান্ধবের ভিড় হইয়াছিল, তিনি স্মিতমুখে সকলকেই – আপ্যায়ন করিয়াছিলেন। গ্রীক দেবতা য়্যাটলাসের ন্যায় তিনি যে এক খণ্ডজগৎকে কঁধে করিয়া ছিলেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভার গ্রহণ করিবে এমন বৃষস্কন্ধ কাহার ? বাড়ীর পরিজন ও পুত্রবর্গের চক্ষু সজল,—কেবল একজন ধীর, বিপলে অটল স্থির, পাষাণের ন্যায় অটল,-তিনি শ্যামাপ্রসাদ । প্রথম খামাপ্রসাদ যৌবনে যেদিন তঁাহার স্ত্রী-বিয়োগ হয়, সেদিনও তাহার সেই ধীর, স্থির, অটল মূর্ত্তি দেখিয়াছিলাম। র্তাহার প্রিয় দুলাল পুত্রের মৃত্যুতেও তিনি অভিভূত হ’ন নাই ; তাহার বিশাল হৃদয়ে বাজ পড়ে, কিন্তু তাহা শোকবিহবল-জনতা