পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারাইয়াও হারাই নাই আশুতোষের মৃত্যু সূর্য্যাস্তের ন্যায়। বাল্যকালে তিনি যখন পিতার করাঙ্গুলি ধরিয়া মিলটনের “প্যারাডাইস লষ্ট’এর প্রথম অধ্যায়, বার্কের হেষ্টিংস সম্বন্ধে বক্তৃতা ও ক্যাম্বেলের ‘আশার আনন্দ’ ('Pleasure of Hope”) আবৃত্তি করিতে করিতে প্রাতভ্রমণ করিতেন, কিংবা প্রায় প্রতি দিন স্কুলে প্রথম থাকিয়া পিতৃদত্ত একটাক পুরস্কার পাইতেন, তখন তিনি তরুণ সূর্য্যের মতই প্রিয়দর্শন ছিলেন। ইহার পরে অপোগণ্ডত্ব-উত্তীর্ণ সূর্য্যের ন্যায়ই তিনি বিদ্যাপীঠে অপূর্ব কৃতিত্ব দেখাইয়া দিঙামণ্ডল আলোকিত করিয়াছিলেন। পরিণত জীবনে আশুতোষ মধ্যাহন্ত ভাস্করের ন্যায় প্রখর ও দুর্নিরীক্ষা, স্বীয় অদ্ভুত তেজের দ্বারা। কর্ম্মক্ষেত্রকে যজ্ঞ-ক্ষেত্রে পরিণত করিয়াছিলেন। সূর্য্যের মত র্তাহার তীব্র দাহিকা-শক্তি সময়ে সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের অসহ্যু হইয়াছে ; কিন্তু মধ্যাহ্ন ভাস্কর যেরূপ অন্যত্র তেজ দেখাইয়াও অশ্বথের নব পত্র-পল্লবের মধ্যে সবুজ রং ছড়াইয়া—তন্মধ্যে নবজাগরণের কলরব ও সাড়া আনয়ন করেন, আশুতোষও সেইরূপ স্বীয় প্রখরতা সত্ত্বেও দেশের তরুণদের মধ্যে জীবন-প্রভাতের শুভ প্রেরণা আনিয়াছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সূর্য্য অস্তমিত হইয়াছে; কিন্তু আমরা তঁহাকে হারাইয়াও হারাই নাই। তঁহারই হাতে-গড়া শ্যামাপ্রসাদ এখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার ; এই তরুণ যুবক পূর্ণচন্দ্রের ন্যায়। প্রকৃতি যেন আশুতোষের মূর্ত্তিতে রং ফিরাইয়াছেন। বালো, যৌবনে ও প্রৌঢ় বয়সে আশুতোষ সূর্য্যের মতই কখনও মধুর-উজ্জল, কখনও স্বীয় তেজে দীপ্ত, কখনও তাঁহার উগ্র দাহিকা-শক্তিতে কেহ সম্মুখে অগ্রসর হইতে সাহসী হয় নাই। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ সকল অবস্থায়ই স্নিগ্ধ, অমায়িক ও প্রিয়দৰ্শন এবং তরুণ যৌবনেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার। ইনি প্রথম হইতেই