পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট R 0 দিতেন, সেই হাসি এবং উৎসাহ-ব্যাঞ্জক চোখের ইসারায় তাহারা আশ্বস্ত হইত ও তাদের মনের কথা খুলিয়া বলিত। মাঝে মাঝে র্তাহার ব্যবহার বাহ্যতঃ একটু কঠোর ঠেকিলেও তাহার হৃদয় ছিল কোমল, সহানুভূতিপূর্ণ ও পরদুঃখ-কাতর। তিনি সর্বদাই মুক্ত হৃদয় ও স্পষ্টবাদী ছিলেন, মিছামিছি। আশা দিয়া কাহাকেও ঘুরাইতেন না। যদি তাহার দ্বারা কাহার ও উপকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকিত, তবে তিনি সর্বান্তিঃকরণে ও সাধ্যমত তাহা করিতেন। আশুতোষ রহস্য-প্রিয় ছিলেন। তঁহার হাসিটি যাহারা দেখিয়াছে, তাহারা তাহা ভুলিতে পারিবে না। এক দিন রবিবার সায়াহ্নে দূর মফঃস্বল হইতে একটি ছাত্র তাহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছিল ; এই ছাত্রটি আশুতোষকে কখনও দেখে নাই । দৈবক্রমে সামান্য পরিচ্ছদ-পরিহিত আশুতোষ স্বয়ং সেই বারান্দা দিয়া তখন আসিতেছিলেন , ইনি যে আশুতোস হইতে পারেন, ইহা কিছুমাত্র সন্দেহ না করিয়া বালকটি তাহাকে সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করিল-“আমি অশুবাবুর সঙ্গে কখন দেখা করিতে পারি ?” আশুবাবু বেশ আমোদ বোধ করিলেন এবং ছেলেটিকে বেঞ্চের উপর নিজের কাছে বসাইয়া পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন-সে কি জন্য আসিয়াছে এবং বলিলেন যে, তিনি ‘আগুবাবুকে খুব ভালরূপেই জানেন এবং তাহার কি দরকার, তাহ শুনিলে তঁাহাকে দিয়া সেই কাজ উদ্ধার করাইবার চেষ্টা করিবেন। বালকটি এই “অপরিচিত ব্যক্তির’ আগ্রহে বিশেষ কোন উৎসাহ বোধ করিল না এবং মাথা নাড়িয়া ধীরভাবে বলিল,-“আমি আশুবাবুর কাছে আসিয়াছি,-তাহার কাছে,-শুধু তাঁহারই কাছে আমার কথা বলিব ।” আশুতোষ এই ব্যাপারে বেশ একটু আনন্দ উপভোগ করলেন এবং নিজের কক্ষে ঢুকিয়া সেই বালকটিকে ডাকিয়। পাঠাইলেন। বালকটি সেই কক্ষে ঢুকিয়া সবিস্ময়ে দেখিতে পাইল যে, সেই ব্যক্তিই হাস্তোজ্বল মূর্ত্তিতে গৃহের সর্বাপেক্ষ। বৃহৎ কেদারা খানিতে বসিয়া আছেন। সে নিজের ভুল বুঝিতে পারিয়া, কিরূপে যে আশুতোয্যের নিকট ক্ষমা চাহিবে, তাহা স্থির করিতে না পারিয়া দিশাহারা হইয়া গেল। বালকটি জানু পাতিয়া তাহার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করিতে উদ্যত হইলে আশুতোষ তাহাকে ধরিয়া তুলিলেন এবং মিষ্ট বাক্যে তাহাকে সম্পূর্ণরূপে আশ্বস্ত করিলেন। সে যাহার জন্য আসিয়াছিল, তাহ সিদ্ধ হইল ; বস্তুতঃ তাহা ছাড়া আরও কিছু পাইল,—এক প্লেট, মিষ্টান্ন তখনই সেখানে আসিল এবং সে স্বচ্ছন্দ মনে তাহ খাইল । বাস্তবিক বঙ্গদেশে আশুতোষ অপেক্ষা ছাত্রগণের অধিকতর অন্তরঙ্গ বন্ধু কেহ । ছিলেন না ! তাহদের প্রতি আশুতোষের প্রগাঢ় ভালবাসা এবং তাহাদের হিতার্থ তাহার পরম আগ্রহ ও যত্ন ছাত্রগণ বেশ উপলব্ধি করিত এবং এজন্য তাহদের হৃদয় স্বভাবতঃই তাহার প্রতি অনুরাগে আরুষ্ট হইত। তাহারা তঁহার নিকট শুধু পুস্তক ও