পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R ( O আশুতোষ-স্মৃতিকথা খাটি ভারত-সন্তান। যুগ-যুগান্তর ধরিয়া কি এই ধ্যানশীলতাই আমাদের (Esè উত্তরাধিকার, আমাদের পরম গৌরব ও শ্লাঘার বিষয় হয় নাই ? এই ধ্যানই কি জগতের সভ্যতায় ভারতের বিশিষ্ট দান নহে ? কিন্তু আশুতোষ বাস্তব রাজ্যের সম্পর্ক-বিরহিত বৃথা কল্পনাশীলতার পরিচয় দিতেন না। তিনি উদভ্রান্ত প্রেমিক অথবা উন্মাদের মত শুধুই কল্পনা-সমাশ্রিত ছিলেন না। ম্যাথিউ আনি লন্ড, কবি শেলির সম্বন্ধে লিখিয়াছেন“তিনি ছিলেন এক দিশাহারা সুন্দর দেবতা, তাহার জ্যোতির্ম্ময় পক্ষপুট বৃথাই শূন্যের উপর বিস্তার করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইয়াছিল৷ ” একথা আশুতোষের উপর প্রয়োজ্য হয় না। রবীন্দ্রনাথ আশুতোষের সম্বন্ধে বলিয়াছেন—“তিনি যে সকল স্বপ্ন দেখিতেন, তাহা সংস্কার-ক্ষেত্রে যুঝিয়া তিনি সফল করিতে পারিতেন, —তাহার স্বাক্ষমতার উপর এতটা প্রত্যয় ছিল যে, তিনি বিজয়ী হইবেন,-ইহা জানিয়াই তিনি কর্ম্মের পরিকল্পনা করিতেন, তাহার সঙ্কল্পগুলি কৃতকার্য্যতার পথ-স্বরূপ ছিল ।” সাধারণতঃ আশুতোষের সম্বন্ধে যে সকল আলোচনা হয়, তাহাতে এ পর্য্যন্ত র্তাহার চরিত্রের এই দিকটার প্রতি কেহ লক্ষ্য করেন নাই। কিন্তু এ কথাটা নিশ্চয়ই মনে রাখিতে হইবে যে, তাহার বাস্তব জগতের সমস্ত প্রস্তাবনাই এই ধ্যানশীলতা হইতে প্রেরণা পাইয়াছিল। এই ধ্যানশীলতা হইতে র্তাহার চরিত্রের আর একটা মহৎ দিকের বিকাশ হইয়াছিল,—যাহা তাহার অসীম কর্ম্ম-শক্তি ও বহু-ব্যাপক কার্য্য-ক্ষেত্রের মধ্যে র্তাহাকে অবিচ্ছিন্ন কর্ম্মঠতার ক্ষমতা যোগাইয়াছিল। তাহার চরিত্রের সেই মহৎ দিকটা হইতেছে-জগতের শুভ দিকটার উপর তঁাহার অটল বিশ্বাস। এই যে প্রতি কার্য্যে শুভ দিকটার উপর তাহার বিশ্বাস, তাহা কেদারায় আরামে উপবিষ্ট, সৌখীন দার্শনিকের মত আদৌ নহে। এইরূপ কল্পনা-বিলাসী দার্শনিক সর্ব্ব বিষয়েই পরম নিশ্চিন্ত, অনাসক্ত এবং কিছুর জন্যই উদ্বিগ্ন হ’ন না, বরং বইএর মুখস্থ-করা গৎটি তৃপ্তির সহিত আবৃত্তি করিয়া বলেন-“ঈশ্বর স্বৰ্গে আছেন, সুতরাং পৃথিবীর সবই ঠিক ভাবে আছে ও চলিবে ।” আশুতোষ যদিও তঁহার মহৎ কার্য্যের প্রারম্ভে ঘনঘটার মধ্যেও দুই একটি রাজত-রশ্মি দেখিয়া উৎসাহিত হইতেন, কিন্তু তিনি আকাশ-ব্যাপী, পুঞ্জীভূত মেঘ-সম্বন্ধে উদাসীন থাকিতেন না । জগতে এরূপ লোকের সংখ্যা বেশী নহে, র্যাহার উপর জনসাধারণ নির্ভর করিতে পারে, যাহার আশ্রয়ে তাহদের আশা-ভরসা সিদ্ধ হইতে পারে এবং যিনি সর্ব্ব সময়ে বজ্র-নিৰ্ঘোষে বলিতে পারেন,-“ভয় নাই, যাহা দরকার, করা হইবে।” আশুতোষ এইরূপ আশ্বাস দেওয়ার যাদুমন্ত্র জানিতেন। র্তাহার আশা ও ভবিষ্য সফলতার উপর বিশ্বাস এরূপ প্রবল ছিল যে, সেই বিশ্বাসের জোরে বুঝি পর্বতও নড়িয়া যাইত। যখন ঝড়ের বেগ দুৰ্জয়, তখন মাঝি “তঁহার নাঙ্গর ফেলিতে জানিতেন। যে লোক একান্ত ভাব-দরিদ্র, আক্ষেপশীল ও সর্বদা নতশির, নিজের দুর্বলতা ঢাকিবার জন্য যাহারা