পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

সাগর-সস্তৃত ক্ষুদ্র একটি দ্বীপের ন্যায়, ধরণী-সমুত্থিত এই ক্ষুদ্র শৈলশিখর হইতে, আমি এই হরিতের নীরব অসীমতা সন্দর্শন করিতেছি। এই সেই মেঘান্বরা ভারতভূমি, অরণ্য-সঙ্কুলা ভারতভূমি—জঙ্গলাকীর্ণ। ভারতভূমি; সিংহল মহাদ্বীপের কেন্দ্রবর্তী এই সেই স্থান, যেখানে গভীর শান্তি বিরাজিত,—যাহা তরুশাখার দুৰ্মোচনীয় জটিল বন্ধন-জালে সর্ব্বদাই সুরক্ষিত। এই সেই স্থান, যেখানে প্রায় দ্বিসহজ বৎসরাবধি, অনুরাধপুর নামক একটি পরমাশ্চর্য্য নগর, ঘননিবিড় শাখাপল্লবের নৈশ-অন্ধকারের মধ্যে একেবারে নির্ব্বাপিত।

 বৃষ্টি-ঝটিকার উদ্ভব-ক্ষেত্র সেই নীলাকাশ ভেদ করিয়া, দিবার অভ্যুদয় হইতেছে। এই সময়ে আমাদের ফরাসীদেশে দ্বিপ্রহর রাত্রি। ধরণী পুরন্ধী, সূর্যালোকের সাহায্যে, সেই ধ্বংস-রাজ্যের চিত্রটি আর একবার আমাদের সম্মুখে ধারণ করিতে উদ্যত হইয়াছেন—সেই ধ্বংসরাজ্য, যাহা চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া একেবারে ধূলিসাৎ হইয়া গিয়াছে।

 এখন সেই অদ্ভুত নগরটি কোথায়? * * * জাহাজের মাস্তুল-মঞ্চ হইতে বৈচিত্র্যহীন সাগর-মণ্ডল যেরূপ দৃষ্ট হয়, আমি সেইরূপ এখান হইতে চারি দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিতেছি;— কুত্রাপি মনুষ্যের চিহ্নমাত্রও দেখিতে পাইতেছি না। কেবলই গাছ-গাছ-গাছ। গাছের মাথাগুলি সারি সারি চলিয়াছে—সব এক সমান—সব প্রকাণ্ড। সেই তরুপুঞ্জের উত্তাল তরঙ্গভঙ্গ, সীমাহীন দূরদিগন্তে মিলাইয়া গিয়াছে। ঐ অদূরে কতকগুলি হ্রদ দেখা যাইতেছে, যেখানে কুম্ভীরগণের একাধিপত্য, এবং যেখানে সায়ংকালে বন্যহস্তিগণ দলে দলে আসিয়া জলপান করে। ঐ সেই অরণ্য—ঐ সেই জঙ্গল, যেখান হইতে বিহঙ্গগণের প্রভাতিক আহ্বান-সঙ্গীত সমুত্থিত হইয়া আমার অভিমুখে প্রবাহিত হইতেছে। কিন্তু সেই পরমাশ্চর্য্য নগরটির চিত্রও কি আর দেখিতে পাইব? ***