পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

(তৎকালীন নাম “মহোদ্রপত্‌না”) বাসস্থাপন করে। পরধর্ম্মসহিষ্ণু হিন্দুরা উহাদিগকে সাদরে গ্রহণ করিয়াছিল। এখনও পর্য্যন্ত এই ক্ষুদ্র ঔপনিবেসিকমণ্ডলী, পার্শ্ববর্ত্তী হিন্দুগণ হইতে—সমস্ত জগৎ হইতে স্বতন্ত্র থাকিয়া, পুরুষপরম্পরাগত স্বকীয় ঐতিহ্য ও কুলপ্রথা অক্ষুন্ন রাখিয়াছে। মনে হয়, যেন উহারা কোন জাদুঘরে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক কৌতুকসামগ্রী।

 মাতাঞ্চেরীর এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত অতিক্রম করিয়া, প্রথমেই ‘শাদা-ইহুদি”দিগের সহরে (এ দেশে উহাদিগকে “শাদা-ইহুদি” বলে) উপনীত হইলাম। মাতাঞ্চেরি—একটি বৃহৎ বিপণি বলিলেও হয়—খাঁটি দেশীয় বিপণি,—যেখানকার সমস্ত মানবমূর্ত্তি—সমস্ত মানবদেহ বিশুদ্ধ পিত্তলবর্ণের; সমস্ত দোকানগুলি কাঠের,—বারণ্ডার পশ্চাতে মুক্ত পরিসর—সেই উত্তুঙ্গ সুনম্য তালতরুর তলদেশে অবস্থিত। ক্রোশখানেক ধরিয়া এইরূপ বাজার চলিয়াছে। এইরূপ ভারতীয় দৃশ্যে চক্ষু যখন অনেকক্ষণ অভ্যস্ত হইয়াছে—এমন সময়ে একটা বাঁক ফিরিয়াই একটা পুরাতন “অন্ধকেরে” রাস্তায় হঠাৎ আসিয়া পড়িলাম; যেন ইহা স্থানভ্রষ্ট হইয়া কোনপ্রকারে এখানে আসিয়া পড়িয়াছে। কোন স্থানচ্যুত জিনিষ দেখিলে মনে যেমন একপ্রকার অশান্তি উপস্থিত হয় আমার মনে সেইরূপ অশান্তি উপস্থিত হইল। খুব ঘেঁষাঘেঁষি সারি-সারি পাথরের বাড়ী। শীতপ্রধান দেশের ন্যায়, বাড়ীর সম্মুখভাগের মুখশ্রী বিষাদময়, প্রবেশপথগুলি সঙ্কীর্ণ। তাতে আবার, প্রত্যেক গৃহের দ্বারদেশে, গবাক্ষে, বিষাদতমসাচ্ছন্ন এই ক্ষুদ্র রাজপথে, সর্ব্বত্রই ইহুদিমুখ দেখা যাইতেছে। এই আকস্মিক দৃশ্যপরিবর্ত্তনের ন্যায় ইহুদিমুখও আমার চিত্তকে উদ্বেজিত করিয়া তুলিল। এই বিষাদময় জীর্ণদশা, এখানকার এই সমস্ত পরিদৃশ্য,—পার্শ্ববর্ত্তী তালপুঞ্জের সহিত, আকাশের সহিত, যেন একটুও খাপ্‌ খায় না। এই অপ্রত্যাশিত রাস্তাটিতে সহসা আসিয়া, মনে