পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
৯৯

—নীল চীনে মাটি দিয়া ধাঁধানো; দেয়ালগুলা দুধের মত শাদা। গির্জ্জার অভ্যন্তরে লালরঙের—সোনলিরঙের আগুন যেন চারিদিকে জ্বলিয়া উঠিয়াছে। কতই তাঁবার থাম্‌—কতই তাঁবার গরাদে—তার আর অন্ত নাই;—মানব-হস্তের ঘর্ষণে উহা দর্পণবৎ মসৃণ হইয়া উঠিয়াছে। অনেকগুলা বিচিত্র রঙের বহু-পুরাতন ঝাড়লণ্ঠন চাঁদোয়া-ছাদ হইতে লম্বমান;—এইগুলি, বোধ হয়, সেই ঔপনিবেশিক যুগে য়ুরোপ হইতে আসিয়াছিল।

 পাণ্ডুমুখশ্রী, আলখাল্লা-পরা’, দীর্ঘনাসিক কতিপয় ব্যক্তি বিড়্‌বিড়্‌ করিয়া কি প্রার্থনামন্ত্র পাঠ করিতেছিল,—হস্তে হিব্রুগ্রন্থ;—আমাকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য হঠাৎ থামিল। একজন পুরোহিত,—মনে হয়, শতবর্ষ বয়ঃক্রম—কাঁপিতে-কাঁপিতে আমাকে সংবর্দ্ধনা করিলেন, অতিসুক্ষ্মখোদাই-কাজ-করা সেই তাম্রস্তম্ভগুলি আমাকে দেখাইলেন, এবং উহা কিরূপ মসৃণ, স্পর্শ করিয়া দেখিবার জন্য আমাকে অনুরোধ করিলেন; তাহার পর, নীল চীনেমাটিতে বাঁধানো কুট্টিমের সমস্ত বৃত্তান্ত আমার নিকট বিবৃত করিলেন। কুট্টিমটি বাস্তবিকই অমূল্য—এত দুর্লভ জিনিষ যে, উহাতে পা রাখিতে ভয় হয়। প্রায় দশসহস্র বৎসর হইল, এই চীনেমাটি চীনদেশ হইতে ফর্মাস দিয়া আনানো হয়, উহার জাহাজভাড়ায় বহু অর্থব্যয় হইয়াছিল। তাহার পর, আমাকে পুণ্য-মঞ্জুষাটি (Tabernacle) দেখাইলেন; উহা একখণ্ড জরির-পাড়-লাগানো বস্ত্রে আচ্ছাদিত ছিল। উহার অভ্যন্তরে কতকগুলি রত্নখচিত মুকুট, রহিয়াছে,—যাহার নক্সা-কল্পনা সলোমন-রাজার মুকুট নক্সার ন্যায় অতীব আদিমকালের। অবস্থাবিশেষে শতবর্ষবয়স্ক বর্ষীয়ান্ পুরোহিতদিগকে এই মুকুটে বিভূষিত করিবার জন্যই ঐগুলি রক্ষিত হইয়াছে। তা ছাড়া, উহার মধ্যে কতকগুলি ধর্ম্মগ্রন্থ আছে;—অনির্দ্দেশ্য অতীতের কতকগুলা গোটানো পার্চমেণ্ট-কাগজ,—রূপালি-জরির পাড়ওয়ালা কালো রেশ্‌মি কাপড়ে আচ্ছাদিত।

 অবশেষে, উহাদের যেটি বহু আদরের পবিত্র স্মৃতিসামগ্রী—সেইটি