পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।

 কিন্তু এ কি দেখি?—কতকগুলি ছোট ছোট পাহাড়—অতীব অদ্ভুত, তরুসমাচ্ছন্ন, অরণ্যের ন্যায় হরিৎবর্ণ—কিন্তু একটু যেন বেশী সুষমা-বিশিষ্ট;—কোনটা বা পিরামিডের ন্যায় চূড়াকার, কোনটা বা গম্বুজাকার—ইতস্ততঃ সমুত্থিত; আর সমস্ত পদার্থ হইতে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হইয়া, পল্লবপুঞ্জের মধ্য হইতে মস্তক উত্তোলন করিয়া রহিয়াছে।

 * * * এইগুলি পুরাতন মন্দিরসমূহের চূড়াদেশ—প্রকাণ্ড “দাগোবা।” খৃষ্টের দুই শতাব্দী পূর্ব্বে এইগুলি নির্ম্মিত হয়। অরণ্য ইহাদিগকে ধ্বংস করিতে পারে নাই—স্বকীয় হরিৎ-শ্যামল শব-বসনে আবৃত করিয়া রাখিয়াছে মাত্র;—উহাদের উপর, অল্পে অল্পে, মৃত্তিকা, শিকড়, ঝোপ-ঝাড়, লতাগুল্ম ও কপিবৃন্দ আনিয়া ফেলিয়াছে।

 বৌদ্ধধর্মের প্রথম যুগে যেখানে ভক্তগণ আরাধনা করিত, এই “দাগোবা”গুলি তাহারই মুখ্য নিদর্শন; সেই স্থান—সেই পুণ্য নগরীটি আমার নিম্নদেশে পল্লব-মণ্ডপ-তলে প্রচ্ছন্ন হইয়া নিদ্রা যাইতেছে।

 আমি যে ক্ষুদ্র পাহাড় হইতে চতুর্দিক নিরীক্ষণ করিতেছি, ইহাও একটি পবিত্র দাগোবা। যিনি যীশুর ভ্রাতা ও অগ্রদূত, সেই মহাপুরুষের লক্ষ লক্ষ ভক্তবৃন্দ, তাঁহার মহিমার উদ্দেশেই, এই মন্দিরটি নির্ম্মাণ করে। প্রস্তর-খোদিত কতিপয় হস্তী ও পৌরাণিক দেবমণ্ডলী ইহার তলদেশ আগ্‌লাইয়া রহিয়াছে। পূর্ব্বে, প্রতিদিনই এখানে ধর্ম্মসঙ্গীতের কলধ্বনি শ্রুত হইত, এবং উহাই তথন প্রার্থনা ও আরাধনার শান্তিময় আনন্দাশ্রম ছিল।

 “অনুরাধপুরে অসংখ্য দেবালয়, অসংখ্য অট্টালিকা। উহাদের গম্বুজ, উহাদের মণ্ডপ-সকল সূর্যকিরণে সমুদ্ভাসিত। রাজপথে, ধনুর্বাণধারী এক দল সৈন্য; গজ অশ্ব রথ, লক্ষ লক্ষ মনুষ্য, অবিরত যাতায়াত করিতেছে। তাহার মধ্যে বাজিকর আছে, নর্ত্তক আছে, বিভিন্ন দেশের বাদক আচ্ছ। এই বাদকদিগের ঢাক প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত।