পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
১০৭

 কিয়ৎকাল বিশ্রামের পর, আমি আবার সেই দ্বীপটির মধ্যে—সেই আমার সুপ্ত প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করিলাম।,

 যখন সূর্য্য অন্তপ্রায়, সেই সময়ে এখান হইতে চিরবিদায় লইবার জন্য আমি উদ্যেগ করিলাম। সেই চল্লিশ দাড়ের নৌকায় উঠিয়া কোচিনরাজ্যের দক্ষিণতম নগর “ত্রিচূড়"-অভিমুখে যাত্রা করিলাম। এখান হইতে আরো একরাত্রির পথ যাইতে হইবে।

 প্রত্যেক জলযাত্রার আরম্ভে আমার নৌকা ইতপূর্ব্ব্বে যেরূপ বেগে চলিয়াছিল, এবার সেইরূপ বেগে চলিল। বিশ্রামের পর দাড়ীরা নববলে বলীয়ান্ হইয়া, কোদালি-কোদালি মাটি উঠাইবার মত, 'প্রত্যেক দাড়ের আঘাতে রাশি-রাশি জল উঠাইয়া চলিতে লাগিল। দাড়ীদের সাহায্যার্থে আমরা পাল তুলিয়া দিলাম। তালীবনসমাচ্ছন্ন দুই কুলের মধ্যবর্তী বিলের মধ্যে আবার প্রবেশ করিলাম।

 বলা বাহুল্য—আমাদের অস্তগামী সূর্য্য রক্তিম স্বর্ণ-আভার মধ্যে অবতরণ করিয়া নিৰ্বাপিত হইল; এবং পরক্ষণেই,ঐ অদূরে, চির-উদ্ভিজ্জের পশ্চাতে অদৃশ্য হইয়া পড়িল। আমাদের এই প্রশান্ত জগতের উপর, অতীব মধুর বর্ণে রঞ্জিত নির্মেঘ অমল আকাশ প্রসারিত। আমরা এখন মৎস্যজীবীর রাজ্যে—জেলে-নৌকার মধ্যে—মৎস্যজালের মধ্যে আসিয়৮ পড়িয়াছি। এই ভারতীয় বিলের চারিধারে, তালীবনের পর্দা থাকায় সেই আদিমকালের হূদবাসী মৎস্যজীবীর জীবন এখানে বেশ সুরক্ষিত রহিয়াছে।

 কল্যকার মত আজও আমার মাঝিমাল্লারা মুখ বুজিয়া সমস্বরে তান ধন্ধিয়াছে; এই তান,—এই প্রশান্ত সময়ের সহিত বেশ খাপ খাইয়াছে। পবনদেবের কৃপায় আমাদের নৌকা পালভরে চলিতেছে; দাড়ীরা ঔদাস্তের সহিত অলসভাবে দাঁড় ফেলিতেছে। অন্য নৌকাতেও জেলেরা গান ধরিয়াছে; যে স্বরে গান গাহিতেছে, তাহা মানবকণ্ঠ পর বলিয়া মনে হয় না,মনে হয় যেন গির্জ্জাঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি