পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

দূর হইতে ও চারিদিক্‌ হইতে এই শব্দযোনি জলরাশির উপর আসিয়া পৌছিতেছে।

 যে-সব সাদাসিধা সরলপ্রাণ বিশ্বস্তচিত্ত অসংখ্য লোক আমাকে ঘিরিয়া আছে—মনে হয় যেন উহারা হরিৎ-শ্যামল তালীবনের ছায়াময় সমাধিগর্ভ হইতে সশরীরে পুনরুত্থান করিয়া, এই “খয়রাৎ-ডাঙায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে!—বিভিন্ন পুরাতন আচার-অনুষ্ঠানে আবদ্ধ খৃষ্টান, হিন্দু কিংবা ইহুদি; কিন্তু ইহারা সকলেই সমান শ্রদ্ধার পাত্র, একই সত্য উহাদের সকলেরই পশ্চাতে প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে।...যে ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম্ম এমন কঠোরভাবে রক্ষিত, তাহারও মধ্য হইতে যদি আমি দুরধিগম্য সত্যের দুইএক টুকরা পাইতে পারি—এই শিশুসুলভ আশা আমার চিত্তকে অধিকার করিয়াছিল!...কিন্তু না;—যেমন অন্যত্র, তেনি এখানেও, চিরবিদেশী ও চিরপান্থ হইয়াই আমাকে থাকিতে হইল;—প্রাণী ও পদার্থসমূহের বাহভাবদর্শনে নেত্রের তৃপ্তিসাধন ভিন্ন আমি আর কিছুই করিতে পারিলাম। তা ছাড়া, আমার যাত্রা শেষ হইয়াছে—আমি চলিলাম; গান গাইতে-গাইতে ও দোলাইতে-দোলাইতে, একখানি সুন্দর নৌকা করিয়া মাঝিমাল্লারা আমাকে লইয়া চলিল। ইহাতেও আমার আনন্দ; এইটুকুই আমার সৌভাগ্য; এবং ইহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট।...

 দিগবলয়ের চারিধারে অরণ্যের নীল যবনিকা;—এই নীলিম ক্রমশ গভীর হইতে গভীরতর হইয়া উঠিল; অস্তাচলদিগন্তের ক্ষণস্থায়ী নীলিমা ক্রমে ঘোর কৃষ্ণবর্ণে পরিণত হইল। ইতস্তত, অপেক্ষাকৃত বিশাল একএকটি তালবৃক্ষের নিঃসঙ্গ ছায়াচিত্র বৈচিত্র্যহীন অরণ্যরেখার উপরিভাগ পরিস্ফুটরূপে অঙ্কিত। সম্মুখে তারকাবলী। মুমুধু সোনালি-গোলাপি আভার মধ্যে শুক্রগ্রহ প্রজ্বলিত হইয়া উঠিয়াছে; এবং তাহার পার্শ্বে নবইন্দু সমুদিত। এরূপ চন্দ্র সব-সময়ে দেখা যায় না কোন বিশেষ সময়ে, গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বিমল-স্বচ্ছ নভোমণ্ডলেই দৃষ্ট হয়;—একটি ভাস্বর