পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

মত। এই সকল নগর,—আধুনিক পদার্থসমূহ হইতে বহু দূরে-তরুপুঞ্জের মধ্যে নিমজ্জিত হইয়া, বহুকাল হইতে স্বকীয় জীবন রক্ষা করিয়া। আসিতেছে। ত্রিচূড়ের মন্দিরটি অতীব প্রকাণ্ড ও ভীমদর্শন। এই ত্রিচূড়নগরের অপর মাম—"তিবু শিবায়-পেরিয়া-বুর"—অর্থাৎ শিবের পবিত্র মহানগরী।

 এই মন্দিরের সম্মুখস্থ ভূমিতে আমি অবতরণ করিলাম। ইহা মন্দিরও বটে, দুর্গও বটে। এক সময়ে ইহা সেই দুর্দান্ত মহিশূরসুন টিপুর অবরোধ সহ্য করিয়াছিল। দুর্গের ঢালুমাটির উপর দিয়া মন্দিরে উঠিতে হয়। এখন এই ভূমির উপর অলস মেষদল ও গয়াদি নিদ্রা যাইতেছে। ব্রাহ্মণেরা মন্দিরের একটা দ্বারদেশে বসিয়া ধান ও প্রাতঃসূর্যের উদয় নিরীক্ষণ করিতেছে। আমি আসিতেছি দেখিয়া শশব্যস্ত হইয়া উহার আমার দিকে অগ্রসর হইল। এই বিদেশী না-জানি কি মনে করিয়া এখানে আসিতেছে!...কিন্তু আমি তাহাদিগকে বলিলাম,—আমি সব জানি, আমি কেবল মন্দিরচূড়ার কারুকার্য দেখিবার জন্য এখানে আসিয়াছি;—যথাযোগ্য দূর হইতে আমি উহা দর্শন করিব। তখন তাহারা হাসিমুখে আমাকে অভিবাদন করিল এবং নিশ্চিন্তমনে আবার মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করিল। গুরুভার প্রাচীরগুলা সুধালেপের দ্বারা ধবলীকৃত; কিন্তু যাহার উপর খোদাই-কাজ-করা চারিটা চূড়া আছে,—চারিদিকের সেই চারিটা দ্বার, ভারতীয় প্রস্তরের ন্যায় শ্যামলবর্ণ। দূর-অতীতের এই পুরাতন শ্যামল চূড়াগুলি প্রচুর অলঙ্কারে ভূষিত;—বহুল ক্ষুদ্রস্তম্ভ ও বর্বর মূর্তিসমূহে পরিপূর্ণ।

 এই যে শীতকালের ঝড়ঝটিকা এখানকার সকল পদার্থকেই উৎপীড়ন করে—আলুলিতকুন্তল বৃহৎ বটবৃক্ষদিগকে বাঁকাইয়া দেয়—পথে-ঘাটে লাল ধূলা উড়াইয়া দেয়—ইহার প্রভাব কি এই শিবপুরীতে কিছুমাত্র প্রকটিত হয় নাই? পথের ধারে-ধারে সর্ব্ব্বত্রই বর্ষীয়ান্ তরুগণের তলদেশে