পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন।
১১১

পূজা-অর্চনার জন্য একএকটি শান্তিময় নিভৃত স্থান রহিয়াছে। আমাদের ‘দেশে, যেখানে মৃত্তিকাপের উপর ক্রুশ-দণ্ড স্থাপিত হয়—সেই সব চত্বরভূমির উপর-চৌমাথা রাস্তার উপর, এখানে ছোট-ছোট প্রস্তরবেদিকা, বিগ্রহশিলা, প্রতিমাদি প্রতিষ্ঠিত।

 রাস্তার পথিক খুবই কম। স্বকীয় নগ্নতার সৌন্দর্য্যে গর্বিত, কেশগুচ্ছ আকটিবিলম্বিত—শিব কিংবা বিষ্ণুর তিলকচিহ্নে ললাট চিত্রিত —স্বপ্নময় ঢুলুঢুলু নেত্র—এইরূপ কতকগুলি লোক মন্দিরাভিমুখে চলিয়াছে; প্রায় সকলেরই বক্ষদেশে, উচ্চবর্ণের চিহ্রস্বরূপ উপবীত রহিয়াছে। কতকগুলি রমণী ইন্দারায় জল লইতে আসিয়াছে। তাহাদের বঙ্কিম দেহভঙ্গী;—স্কন্ধের উপর ঝকঝকে তাঁবার কলস রহিয়াছে। স্তনযুগলের একটিতে বক্ষের বসন ফুলিয়া উঠিয়াছে;অপরটি (প্রায়ই ডানদিকার) নগ্ন রহিয়াছে। এই সব তরুণীর তরুণ বক্ষোদেশ য়ুরোপীয় জাতিদিগের অপেক্ষা একটু বেশি পরিপুষ্ট,—নিতম্বের তুলনায় একটু বেশি অতিরিক্ত কিন্তু উহার গঠন অনিন্দ্যসুন্দর। বহু পুরাকাল হইতে হিন্দুরা তাহাদের প্রস্তর ও ধাতুময় মূর্ত্তিসকল যেরূপভাবে গঠন করে—উহাতে নারীসৌন্দর্য্যের উপকরণগুলি যেরূপভাবে অতিরঞ্জিত করে—এই রমণীরাই সেই-সব প্রতিমূর্ত্তির জীবন্ত আদর্শ। পথিমধ্যে তাহাদের সহিত কখন সাক্ষাৎ হইলে, তাহাদের নয়নকোণের চোরা-চাহুনি তোনার দৃষ্টির উপর নিপতিত হয়;—তাহাদের সেই দৃষ্টি বড়ই মধুর, কিন্তু নিতান্ত উদাসীন-নিতান্ত অন্যধরণের;—যেন উহা কালো বিদ্যুতের অনিচ্ছাকৃত সোহাগ-আলিঙ্গন; কিন্তু পরক্ষণেই সেই দৃষ্টি আবার নিম্নদিকে নত হইয়া পড়ে। বিদেশী পথিকের নিকট এদেশের —বহৎ মন্দির যেরূপ দুজ্ঞেয়, সমস্ত পদার্থই যেরূপ দুজ্ঞেয়—এই, রমণীরাও সেইরূপ দুয়ে।

 সীমান্তদেশে পৌঁছান পর্য্যন্ত আমি কোচিনরাজের অতিথি