পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১১৩

লগ্ন হইতে পারে নাই। এই হেতু, স্বভাবতই পুরাকালের ভারতবাসী সেই মহাযোগী ঋষিগণ এই শৈলটিকে স্বকীয় আরাধনার স্থান করিয়া লইয়াছেন। বহুকাল ধরিয়া, ধৈর্য্যসহকারে তাহার এই শৈল-প্রস্তর কাটিয়া, অলিন্দ-সোপানাদি-সমন্বিত দেবালয় নির্মাণ করিয়াছেন। উহার শীর্ষদেশে কনক-মণ্ডিত চূড়া ঝম করিতেছে। যুগযুগান্তর কাল হইতে, প্রতিরাত্রে ঐ চূড়ার উপর পূত অগ্নি জ্বালানো হইয়া থাকে। সাগরস্থ দীপস্তম্ভের ন্যায়, তাঞ্জোরের দূর দিগন্ত হইতেও উহা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়।

 আজ প্রাতঃকালে সূর্যোদয়ে, শৈলের পদ প্রান্তস্থ নগরটি অন্য দিন অপেক্ষা আজ যেন একটু বেশী চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। আগামী কল্য ব্রাহ্মণদিগের একটা মহা পূজা-পার্ব্বণের দিন। গত কল্য হইতে উহারা বিষ্ণুপূজার জন্য অসংখ্য হলদে ফুলের মালা প্রস্তুত করিতেছে। রমণীরা, বালিকরা, উৎসবের সাজসজ্জায় ভূষিত হইয়া, যাহার যাহা-কিছু উত্তম অলঙ্কার ছিল—বলয়, নথ, কান্-বালা—সমস্ত পরিধান করিয়া, তাম্রকলসে জল ভরিবার জন্য, উৎসবের চারিধারে আসিয়া মণ্ডলীবদ্ধ হইয়াছে। শকটের বলদদিগের সিং রং-করা—সোনার-গিটি করা। তাহাদের কণ্ঠহার, ছোট ছোট ঘণ্টা ও কাচের গুটিকায় বিভূষিত। মালার দোকানদারেরা, দোকানে রাশি রাশি মালা সাজাইয়া রাখিয়াছে—একপ্রকার ছোট ছোট লাল ফুল, বঙ্গীয় গোলাপ, গাঁদা—এই সকল পুষ্প মুক্তার মত গাঁথিয়া, কতিপয় হার-বিশিষ্ট মালা রচিত হইয়াছে। এই মালাগুলি অজাগর অপেক্ষাও স্থূল। ইহার ঝুলগুলিও ফুলের, “জড়ি দিয়া জড়ানো। কল্য, যাহারা পূজা-উপলক্ষে আসিবে, এবং মন্দিরস্থ দেবতারা—সকলেই এই হদে ও গোলাপী রঙের মালাগুলি কণ্ঠে ধারণ করিবে। এই উৎসবের কর্মকর্তারা, আজ প্রত্যুষেই গাত্রোত্থান করিয়া, স্বকীয় আবাসগৃহের মুখে ও সযত্নসন্মাঙ্খিত কুটিম-ভূমির উপরে, ফুলের ও নানাপ্রকার রেখার নক্সা চিত্র করিবার জন্য ব্যস্ত; একটা ছোট সাদা গুড়ার পাত্র হস্তে