পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।র্ষ
১১৫

সোজা উঠিয়াছে। যে ধূলা এখানকার সব জিনিস লাল করিয়া দেয়, সেই লাল ধূলা-সত্ত্বেও, এই মজিগুলি, ‘হেজাজে’র মসজিদের মত, কোন উপায়ে স্বকীয় তুষার-শুভ্রতা রক্ষা করিয়াছে।

 পিপীলিকাশ্রেণীর ন্যায় লোকের গতিবিধি—লোকের প্রবাহ চলিয়াছে। কাল উৎসবের দিন। আমি শৈল-মন্দিরের অভিমুখে যাত্রা করিলাম। মন্দিরের সম্মুখভাগটি নগর ছাড়াইয়া উর্দে উঠিয়াছে। তিন চারিটি প্রকাণ্ড শৈলস্তপে মন্দিরটি গঠিত; উহাতে একটুও চীড়, নাই, ফাটল নাই, জীর্ণতার রেখামাত্রও নাই। এই স্তুপগুলি পরস্পর-উপযুপরিনিক্ষিপ্ত, জন্তুর পার্শ্ব-দেশের ন্যায় ঈষৎ-বর্তুল, বৃষ্টির জলধারায় মসৃণীকৃত; উহাদের গাত্র এত ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে যে, দেখিলে ভয় হয়। দাঁড়কাকের মেঘে চারি দিক্‌ আচ্ছন্ন;—উহারা অর্ধচন্দ্রাকারে ঘোর-পাক দিয়া উড়িয়া বেড়াইতেছে। জটিল-নক্সা কাটা উচ্চ প্রস্তর-স্তম্ভের মধ্যে, ছোটছোট মন্দির-চূড়ার মধ্যে, (সমস্তই ক্ষয়গ্রস্ত ও বহুপুরাতন) একটা টী কতকগুলি সুলক্ষণাক্রান্ত পবিত্র হস্তিশাবক (আরাধ্য হস্তিবংশ-প্রসূত) প্রবেশ-পথটি প্রায় রুদ্ধ করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। ছোট-ছোট ঘণ্টা-গাঁথা মালায় উহাদের দেহ আচ্ছাদিত। সেই প্রবেশ-পথে উহারা শিশু-সুলভ ক্রীড়াচ্ছলে, আমার গায়ে শুড় বুলাইয়া দিল। এইবার আমার আরোহণ আরম্ভ হইল। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে গিয়া পড়িলাম। সেই সঙ্গে চারি দিক হইতে বাদ্যধ্বনি শুনা যাইতে লাগিল;—শৈল-গহবরের মধ্যে সেই ধ্বনির গভীরতা যেন আরও বৃদ্ধি হইল;—মনে হইতে লাগিল, যেন উহা পাতাল-গর্ভ হইতে নির্গত হইতেছে।

 বলা বাহুল্য, আমি এক্ষণে মন্দিরের কাছে আসিয়া পড়িয়াছি। কত গুপ্ত,কক্ষ, কত অলিন্দ, কত প্রবেশ-দালান, কত সিঁড়ি;—ইহার মধ্যে কতকগুলি কেবলমাত্র পুরোহিতদিগের ব্যবহার্য্য;—এই সিঁড়িগুলি