পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১১৯

মন্দিরের মধ্যে রাজত্ব করিতেছেন, সেখান হইতে, দ্বিসহস্র বৎসর যাবৎ, বাধ্বনি ও বন্দনা-গান অবিরাম উচ্ছসিত হইতেছে।

 আমি এখন মনুষ্য ও পাখীর রাজ্য ছাড়াইয়া বহু ঊর্ধে আসিয়াছি। নীচে কাকেরা ঘোরপাক দিয়া উড়িতেছে, চীলেরা উধাও হইয়া উর্ধে উঠিয়াছে-মনে হইতেছে, যেন নিঃস্পন্দ হইয়া স্থিরভাবে আকাশে ঝুলিতেছে। এই মন্দিরস্থ গণপতি যে প্রদেশের উপর আধিপত্য করিতেছেন, ঐ প্রদেশটি পূজা-অর্চনায় যেরূপ উন্মত্ত, সমস্ত ভূমণ্ডলে এরূপ আর কুত্রাপি দেখা যায় না। দেবালয়-সমূহ যেন বৃক্ষের ন্যায় চাৰি দিক হইতে গজাইয়া উঠিয়াছে। চারি দিকেই দেব-মন্দিররূপ লোহিত-কুসুম-রাশি যেন হঠাৎ বনভূমি হইতে বিকসিত হইয়া উঠিয়াছে। তাল নারিকেলের বন হইতে এত মন্দির উঠিয়াছে যে, এই উচ্চস্থান হইতে মনে হয়, যেন তৃণক্ষেত্রের মধ্যে, শৃগালের কতকগুলি আবাসগর্ত্ত রহিয়াছে।

 ঐ অদূরে, ২০টা ত্রিকোণাকৃতি প্রকাণ্ড মন্দির-চূড়া—যেন কোন ছাউনিতে কতকগুলি তবু একত্র সাজানো বহিয়াছে। উহা ‘শ্রীরাগমে’র মন্দির। যতগুলি বিষ্ণুমন্দির আছে, তন্মধ্যে ঐটি সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ। কাল ওখানে মন্দিরের উৎসব-উপলক্ষে, লোকেরা ঠাকুর লইয়া মহাসমারোহে রাস্তায় বাহির হইবে—আমি দেখিতে যাইব।

 শৈলের ঠিক তলদেশে একটি নগর অধিষ্ঠিত—এখান হইতে ঝুঁকিয়া যেন একেবারে উহার উপরে গিয়া পড়া যায়। মনে হয়, যেন কোন-একটা রং-চং-করা মানচিত্রে রাস্তাসমূহের জটিল নক্সা-জাল অঙ্কিত; বিচিত্র বর্ণে রঞ্জিত মন্দিরের ছড়াছড়ি; কতকগুলি মন্দির খুব সাদা ধবধবে—তাহাতে একটু নীলের আভা স্ফুরিত হইতেছে। সূর্যকিরণদীপ্ত দর্পণের ন্যায় পুণ্যতীর্থ-পুষ্করিণীগুলি ঝিকমিক করিতেছে, আর সেই পুঘরণী-জলে ব্রাহ্মণেরা প্রাতঃস্নান করিতেছে—মনে হয়, যেন কালো-কালো অসংখ্য মাছি ভাসিতেছে।