পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১২৫

একজন অতীব সৌম্যমুর্তি বৃদ্ধ পুরোহিতের নিকট আমি সমস্ত অবগত হইলাম। তিনি বলিলেন, এই উৎসব, নিশ্চয়ই কাল সূর্যোদয়সময়ে হইবে, এবং যদি এই উৎসব দেখিতে হয়, তাহা হইলে আমাকে এইখানেই রাত্রিযাপন করিতে হইবে।

 আমি তৎক্ষণাৎ গাড়ীতে উঠিয়া ক্ষুৎপিপাসানিবৃত্তির জন্য আমার বাসায় গেলাম, এবং রাত্রি যাপন করিবার নিমিত্ত আবার মন্দিরে ফিরিয়া আসিলাম।

 কিছু আহাব করিয়া পান্থশালা হইতে যখন বাহির হইলাম, তখন মধুর চন্দ্রমা রজতকিরণ বর্ষণ করিতেছেন। এই কিরণচ্ছটা এত শুভ্র “যে মনে হয় যেন, তৃণশূন্য নগ্ন ভূমির উপর—সুধালিপ্ত প্রাচীরের উপর অজস্র তুষারপাত হইতেছে। *

 আমাদের শীতদেশীয় বৃক্ষের ন্যায়, চতুর্দিকস্থ লজ্জাবতী লতাগাছের মধ্যে, চন্দ্রের পাণ্ডুর কিরণ সর্ব্বতোভাবে প্রবেশ করিয়াছে। কেন না, উহার শাখাপল্লব অতীব বিরল ও সূক্ষ্ম প্রায় দৃষ্টির অগোচর। নরম পালকের থোপনার মত, উহাদের ছোট ছোট ফুলগুলিও যেন পড়ন্ত তুষারকণার অনুকরণ করিতেছে—ভূতলস্থ জমাট হিমকণার অনুকরণ। করিতেছে। মনে হয় যেন, শীতপ্রধান উত্তর দেশের একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য এই অত্যুষ্ণ দেশে পথ ভুলিয়া আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এখন আর আমি কিছুতেই বিস্মিত হই না—কেন না, এ দেশে যাহাই দেখি, তাহাই অপূর্ব্ব,সমস্তই যেন বিচিত্র ছায়াচিত্রপরম্পরা,—সমস্তই পরিবর্তনশীল মৃগতৃষ্ণিকা।

 কিন্তু এই শীতের বিভ্রমটি ক্ষণিক; কেন না, এই শুষ্ক তৃণহীন ভূমিখণ্ড হইতে বাহির হইবামাত্র, বৃহৎ তালজাতীয় বৃক্ষের, বটবৃক্ষের, Bindweed বৃক্ষের পরিস্ফুট ছায়াতলে আসিয়া উপনীত হইলাম।

 এই সময়ে উৎসব-দীপাবলীর আলোকচ্ছটায় নগরটি উদ্ভাসিত।