পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।

মাটির রাস্তা দিয়া আমাদের ক্ষুদ্র ডাক-গাড়ীটি চলিয়াছে; প্রায় প্রতি পাঁচ মাইল,অন্তর ঘোড়া বদলি হইতেছে; আমরা ঘোড়াদের ইচ্ছামত চলিয়াছি। ঘোড় চার-পা তুলিয়া ছুটিতেছে, মাঝে মাঝে লাথিও ছুঁড়িতেছে। অনেক বার গাড়ী হইতে আমাদিগকে লাফাইয়া পড়িতে হইয়াছে, দুই একটা “অ-ভাঙ্গা” বুনো ঘোড়া সমস্ত ভাঙ্গিয়া-চুরিয়া ফেলিতে উদ্যত;—উহারা গাড়ী টানার কাজে সবেমাত্র শিক্ষানবিশী আরম্ভ করিয়াছে। এই দুষ্ট ঘোড়াদের ক্রমাগত বদলি করা হইতেছে; ইহাদের চালাইবার জন্য দুই জন ভারতবাসী নিযুক্ত। এক জন রাশ ধরিয়া থাকে, আর এক জন তেমন বিপদ উপস্থিত হইলে, ঘোড়ার মাথার উপর লাফাইয়া পড়িবার জন্য সর্ব্বদাই প্রস্তুত। আর এক জন তৃতীয় ব্যক্তি আছে, সে ভেঁপু বাজায়; ভেঁপু বাজাইয়া শ্লথ-গতি গরুরগাড়ীগুলাকে পথ হইতে সরাইয়া দেয়;অথবা, নারিকেল-কুঞ্জ-প্রচ্ছন্ন কোন গ্রামের মধ্য দিয়া যখন গাড়ী চলে, তখন গ্রামবাসীদিগকে সতর্ক করিয়া দেয়। আট ঘণ্টার মধ্যে আমাদিগকে যথাস্থানে পৌছাইয়া দিবে, এইরূপ কথা ছিল। কিন্তু অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হওয়ায়, আমাদের ক্রমাগত বিলম্ব হইয়া যাইতেছে।

 সন্ধ্যার দিকে, গ্রামের বিরলতা ও অরণ্যের নিবিড়তা ক্রমশই বাড়িতে লাগিল। কিয়ৎকাল পূর্ব্বে, একদল মানুষ যাইতেছে, দেখিয়াছিলাম। মহাপ্রভাবশালী তরুকুঞ্জের মধ্যে উহারা কি ক্ষুদ্র!—উহারা যেন তাহাদের মধ্যে হারাইয়া গিয়াছে। এখন আমাদের ভেঁপুওয়ালার কোন কাজ নাই। লোক নাই ত কাহার জন্য ভেপু বাজাইবে?

 তালজাতীয় তরুগণ এইবার স্পষ্টরূপে অন্তর্হিত হইয়াছে। দিবাবসানসময়ে যাত্রা আরম্ভ করিলে মনে হয় যেন, এই অনন্ত গ্রীষ্মের মধ্যে আমাদের য়ুরোপীয় পল্লীগ্রামের কোন বিজন বনময় প্রদেশে আসিয়া পড়িয়ছি। তবে, এখানকার অরণ্যগুলি অপেক্ষাকৃত বিশাল, এবং ইহার লতা-গুল্ম-বন্ধন-জাল আরও জটিলতর। কিন্তু সময়ে-সময়ে যখন