পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

সমস্ত অবারিত মন্দিরগুলি, এমন কি, আলমারীর ন্যায় সংকীর্ণ ও ক্ষুদ্রতম মন্দিরগুলিও, ছোট ছোট প্রদীপে ও হলদে ফুলের মালায় সুসজ্জিত। শ্রীরাগমের অভিমুখে আমার গাড়ী ছুটিয়া চলিয়াছে; একটার পর একটা কত দৃশ্যই আসিতেছে, কিন্তু সমস্তই পরস্পরের সহিত মিশিয়া যাইতেছে। * * *

 আবার এই সময়েই “রামদানের মাস; সুতরাং মুসলমানের মধ্যেও এখন উৎসব আরম্ভ হইয়াছে! যে মসজিদটির সম্মুখে তুরীভেরী বাদ্যের সহিত, নানা রঙ্গের অসংখ্য উষ্ণীষ চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, সেই মজিটি অসংখ্য প্রজালিত দীপকাঠিতে আচ্ছন্ন। পরী-দৃশ্যটি আরও সম্পূর্ণ করিবার জন্যই যেন সাদা প্রাচীরগুলি, স্তম্ভশ্রেণী, লতাপাতা অঙ্কিত আরবী-ধরণের নক্সাদি, প্রজ্বলিত দীপাবলী,—সমস্তই একটি লাল রঙ্গের সূক্ষ্ম মলম বস্ত্রখণ্ডে আচ্ছাদিত; তাহাতে, মজি একটু ঘোর-ঘোরভাব ধারণ করিয়াছে; উহাতে গোলাপী রঙ্গের ছায়া পড়িয়াছে; বোধ হইতেছে, যেন মজিটি আরও একটু দূরে সরিয়া গিয়াছে; সমস্ত বস্তুর আকারে ও দূরত্বে যেন এক প্রকার অস্পষ্ট অনিশ্চিতভাব আসিয়া পড়িয়াছে; কেবল মর্জিটির ঈষৎনীলাভ তুষারধবল “মিনার” চূড়াগুলি ও গম্বুজটি এই রঙ্গিন বস্ত্রের মধ্য হইতে মাথা বাহির করিয়া রহিয়াছে—উহাদের অর্ধচন্দ্রাকৃতি ধ্বজাগ্রগুলি চালোকে ঝিকমিক করিতেছে; এবং সমস্ত মিলিয়া এক সঙ্গে তারকা-খচিত আকাশের অভিমুখে সমুখিত হইয়াছে।


রথযাত্রার আয়োজন।

 এই ত আমি শ্রীরাগমে আবার ফিরিয়া আসিলাম। এখন রাত্রি। সম্মুখে বৃহৎ বিষ্ণুমন্দিরের প্রাচীর। যেখানে কেবল ব্রাহ্মণেরা বাস করেইহা সেই গণ্ডির মধ্যে অধিষ্ঠিত, এবং আমি এক্ষণে বীথির সেই অংশে উপস্থিত হইয়াছি, যেখান হইতে সমস্ত মন্দিরটি প্রদক্ষিণ করা যায়।