পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১২৭

এইখানে চালোকে রথটি অপেক্ষা করিতেছে। উহার উপর একপ্রকার সিংহাসন কিংবা একপ্রকার চূড়া-বিশিষ্ট মঞ্চ;—উহার গায়ে লাল রঙ্গের, পাণ্ডু রঙ্গের রাংতা ঝকমক করিতেছে; উহার ছাদ, মন্দির-চূড়ার অনুকরণে নির্মিত ও বিবিধ অলঙ্কারে বিভূষিত। ঐ সমন্তের তলদেশে যে আসল রথটি অবস্থিত, উহা ব্রাহ্মণ-ভারতের ন্যায় পুরাতন;—উহা উৎকীর্ণ কাঠফলকামূহের একটা গুরুভার প্রকাণ্ড শুপ-এরূপ প্রকাণ্ড যে, মনে হয় না, উহাকে কেহ কখন নড়াইতে পারে। কিন্তু এই বিভূষিত স্তুপটি—এই ঝকমকে অতি প্রকাণ্ড চূড়াসমন্বিত মঞ্চটি আজ বেশ শোভনভাবে স্থাপিত হইয়াছে। এখন উহাকে, রেশম ও রাংতায়-ঢাকা বাঁশের কাঠামেকাগজ-মোড়া খুব হালকা অথচ একটা জমকালো জিনিষ বলিয়া মনে হইতেছে। রথের চারিধারে দলবদ্ধ হইয়া যে সকল শুক্ল-বেশধারী লোক দাঁড়াইয়া আছে, তাহাদের উপর চাদের কিরণ পড়িয়াছে?—এই সকল ভারতবাসী রাত্রিকালে প্রায়ই সূক্ষ্ম মলমল বস্ত্রে স্বকীয় গাত্র ও মস্তক আবৃত করিয়া উপছায়ার ন্যায় বিচরণ করে; কিন্তু যেন চন্দ্রালোকও যথেষ্ট নহে, উহারা আবার মশাল লইয়া আসিয়াছে। কেন না, বিকট বিরাট কূর্ম্ম-সদৃশ এই রথটির গায়ে, বৎসরের মধ্যে একবার চাকা লাগাইবার জন্য উহাদিগকে আজ বিশেষরূপে খাটিতে হইবে। এই রথচক্র গুলি, উচ্চতায় মনুষ্যের অর্ধ-শরীর ছাড়াইয়া উঠে; এই চক্রগুলি পুরু কাঠফলকের দুই স্তবকে নির্মিত; কাঠফলকগুলি উল্টা-উণ্টিভাবে সন্নিবেশিত, এবং লোহার প্রেক্ দিয়া আবদ্ধ। ইতিমধ্যেই উহারা রথ টানিবার রসি ভূমির উপর লম্বা করিয়া বিছাইয়া রাখিয়াছে; এই রসি ব্রহ্মার জঘার ন্যায় স্কুল; বিরাট রথ-যন্ত্রটি নাড়াইবার জন্য তিন চারি শত উন্মত্ত লোক এই রসিতে আপনাদিগকে জুড়িয়া দিবে।

 এই সময়ে মন্দিরটি—এই প্রস্তররাশির প্রকাণ্ড শুপটি একেবারেই জন্য, নৈশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন, শব্দগভীরতায় ভীষণ। জনপ্রাণী নাই,