পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১২৮

কেবল পার্শ্ববর্তী স্থানের কতকগুলি ব্রাহ্মণ উৎসব উপলক্ষে আসিয়া এইখানে আশ্রয় লইয়াছে। এবং সাদা চাদর মুড়ি দিয়া, সানের উপর সটান পড়িয়া মড়ার মত ঘুমাইতেছে। দূর-দূরান্তরে লম্বমান মিটমিটে প্রদীপগুলা জ্যোৎস্নলোকের সহিত যেন পালা করিয়া, পুত্তলিকা-সমুহের ও স্তম্ভারণ্যের অনন্তত আরও বর্ধিত করিতেছে।

 যে বীথি-পথটি দিয়া কাল প্রভাতে, রথযাত্রা আরম্ভ হইবে, উহা মন্দিরের ভীষণ দন্তুর প্রাকারের চারিধার দিয়া গিয়াছে। এই প্রশস্ত সরল পথটি,—প্রাকার ও ব্রাহ্মণদিগের পুরাতন গৃহ-সমূহের মধ্য দিয়া চলিয়াছে; ছোট ছোট থাম, বারাণ্ডা, বিকট-প্রস্তর-মূর্তি-বিভূষিত সোপান-ধাপ— এই সকলের জটিল মিশ্রণে গৃহগুলি পূর্ণ। পথটি আজ সজীষ হইয়া উঠিয়াছে; কেন না, আজ রাত্রে প্রায় কেহই নিদ্রা যাইবে না। এই সকল শুভ্র-বসন-ধারী লোকেরা দলে দলে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে; মনে হইতেছে যেন, চন্দ্রমার বিরাট ছায়া-মূর্তিখানি উহারা প্রত্যেকে আংশিকভাবে নিজ নিজ দেহে প্রকটিত করিতেছে, এবং দেব ও পশুসমূহের “পিরামিড়” সেই প্রকাণ্ড বিরাট গুরুভার বিষ্ণু-মন্দিরের কৃষ্ণবর্ণ চূড়াগুলি সর্ব্বোপরি রাজত্ব করিতেছে। উচ্চবর্ণের রমণীরা, বালিকারা, গৃহ হইতে বাহির হইতেছে; যে ভূমিখণ্ড চষিয়া—গভীর মাটি খুঁড়িয়া, বিষ্ণুদেবের রথ কাল যাত্রা করিবে, সেই পুণ্যভূমিকে চিত্রিত ও অলঙ্কৃত করিবার জন্য, উহারা স্ব স্ব গৃহের দ্বারদেশে আসিয়া চলা-ফেরা করিতেছে; সচরাচর উহারা প্রাতঃকালেই ঐ লাল মাটি বিচিত্র-রঙ্গের রেখায় অঙ্কিত করে; রথটি খুব প্রত্যুষেই যাত্রা করিবে। আজ রাত্রিটি কি পরিষ্কার! এই চাদের আলোয় দিনের মত সমস্ত স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। আর এই রমণীদিগের নিকট—এই বালিকাদিগের নিকট এত জুই ফুলের মালা রহিয়াছে—এত ফুলের হার তাহাদের কণ্ঠে ঝুলিতেছে যে, মনে হয়, যেন তাহারা সুগন্ধী ধূপাধার সঙ্গে, করিয়া সর্ব্বত্র বিচরণ করিতেছে।