পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

দুঃসাহসের কাজ সন্দেহ নাই। একটা অবিবেচনার কাজ করিয়া ফেলিয়াছে বলিয়া আমার সহিত জড়িত কোন কষ্টকর স্মৃতি তাহার মনে থাকিয়া না যায়, এবং তাহার নিকট হইতে অন্ততঃ শিষ্টাচার-সম্মত একটি বিদায়-দৃষ্টিও যাহাতে আমি লাভ করিতে পারি—এই হেতু, এই সময়ে আমি সরিয়া পড়াই শ্রেয় মনে করিলাম।

 ও-দিকে উজ্জ্বলপ্রভ চুড়াসমন্বিত কনক-পত্র-মণ্ডিত বিষ্ণু-রথের চারিধারে, শুক্লবসনধারী লোকেরা দলে-দলে সম্মিলিত হইয়াছে। দ্বিপ্রহর রাত্রি আগ্রতপ্রায়। এইবার কি একটা রহস্য-ব্যাপার অনুষ্ঠিত হইবে, তাহারই আয়োজন হইতেছে। আমার তাহা দেখিবার অধিকার নাই। উৎসবঘণ্টা এবং জঁমক বর্ধিত করিবার জন্য, বড় বড় সুলক্ষণ হস্তী ('তন্মধ্যে একটির বয়স শতবর্ষ) রথের নিকট আনা হইয়াছে; উহারা জরির সাজে সুসজ্জিত হইয়া চন্দ্রালোকে শরীর দুলাইতেছে—মনে হইতেছে যেন প্রকাণ্ড কতকগুলা কাদার ঢিবি। এই ঘোর নিশাকালেও বৃহৎ ছত্র সকল উদঘাটিত হইয়াছে—ছত্রের প্রান্তদেশে তাবার চাকতি। অষ্টাদশবর্ষীয় এক দল ব্রাহ্মণযুবক ত্রিশূলের অনুকরণে-নির্মিত ত্রিশাখা-বিশিষ্ট কতকগুলা মশাল সইয়া উপস্থিত হইল।

 এইক্ষণে যে রহস্যব্যাপারটি অনুষ্ঠিত হইবে, তাহা এই —ইতরসাধারণের অর্শনীয় সেই পবিত্র সাঙ্কেতিক বিগ্রহটিকে—রাগমের সেই অনন্যসাধারণ প্রকৃত বিষ্ণুমূর্তিটিকে আজ মন্দিরের পশ্চাদ্ভাগে—সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র যে স্থান—সেই নির্দিষ্ট স্থানে লইয়া যাওয়া হইবে। এই বিগ্রহটি বিশুদ্ধ স্বর্ণে গঠিত,—পঞ্চশায় ভুজঙ্গের উপর শয়ন। রথের সম্মুখে একটি মঞ্চের উপর প্রাচীন ধবণের একটি মন্দিরাকার গৃহের অভ্যন্তরে স্থাপিত হইবে; গৃহটি এই উদ্দেশ্যেই বিশেষরূপে নির্ম্মিত; বিগ্রহের পাদদেশে দীপমালা জলিবে, এবং পুরোহিতেরা সমস্ত রাত্রি জাগিয়া বসিয়া থাকিবে। তাহার পর কল্য প্রভাতে, যাত্রোৎসবের সময়ে, বিগ্রহটিকে ঐ মন্দির-গৃহের