একটা জলার ভিতর দিয়া বাহির করিয়া রথের উপর মন্দির-চূড়ার ন্যায় একটা চন্দ্রাতপের নীচে-বসান হইবে। বিগ্রহটি উহার ভিতর প্রচ্ছন্ন থাকিবে। পূর্ব্বোক্ত মন্দিরগৃহে ফিরিবার সময় যতবার এই শ্রীরাগমের বিষ্ণুমূর্ত্তি বীথিটি পার হইবে,—বলা বাহুল্য, ততবারই উহাকে কাপড় দিয়া খুব ঢাকিয়া লইয়া যাইতে হইবে। কাপড় দিয়া ঢাকা হউক, বা না হউক, সে একই কথা; কেন না, যাহাতে অদীক্ষিত ব্যক্তিগণ বিগ্রহটিকে দেখিতে পায়, এই জন্য উহাকে রাত্রিতেই গৃহান্তরিত করা হইয়া থাকে। কিন্তু এ বৎসর, পূর্ণিমা তিথিতে উৎসবের দিনটা পড়ায়, লোকেরা আমাকে দূরে সরিয়া যাইতে বলিল; কারণ আমিই এখানে একমাত্র বিধর্ম্মী; আর বাস্তবিকই রাত্রিটা খুব পরিষ্কার।
তখন আমি, অন্য ব্রাহ্মণ পথিকদিগের ন্যায়, মন্দিরের অভ্যন্তরেই (যে প্রস্তরময় গলির উপর দিয়া রথ চলিবে, তাহা হইতে অবশ্য বহুদূরে) শয়ন করিয়া সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। চারি দিক ঘোর নিস্তব্ধ; সেখানকার শৈত্য প্রায় যেন গোরস্থানের ন্যায় স্থিতিশীল। মধ্যে মধ্যে, নিঃশব্দ পদক্ষেপে লোকেরা নগ্নপদে অতি সাবধানে মন্দিরের সানের উপর যাতায়াত করিতেছে। প্রার্থনা মন্ত্রাদির অস্ফুট গুঞ্জন শুনিতে শুনিতে মন্দিরের সেই শব্দযনি খিলানমণ্ডলের নীচে আমি ঘুমাইয়া পড়িলাম। * * *
রথযাত্রা।
কা! কা!—একটা কাক উষাকে অভিবাদন করিয়া, এবং আমার চতুর্দিকে নিদ্রিত গলিত-দ্রব্যভোজী শত-সহস্র কাককে প্রথম সঙ্কেত জ্ঞাপন করিয়া, আমাকে জাগাইয়া দিল। এই গভীর খিলান-মণ্ডলের প্রতিধ্বনিকারী প্রস্তয়ারণ্য,ঐ অশুভ বায়স-সঙ্গীতকে আরও যেন বাড়াইয়া দুলিল। এই বয়সেরা মন্দিরেরই কুলঙ্গিতে বাস করে। কেন না ইহারাও একটু পবিত্র বলিয়া পরিগণিত। এই প্রতিধ্বনির বিরাম নাই—চতুর্দিকেই