পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

 রথের শীর্ষদেশে, গিণ্টিকরা কাজগুলি ঝক্ মক্ করিতেছে। এইবার যাত্রাকাল উপস্থিত। ভূরীধ্বনি করিয়া যেই সঙ্কেত করা হইল, অমনই পেশী-স্ফীত-বাহু শতসহস্র লোক রজ্জর নিকটে সার দিয়া দাঁড়াইল। সমস্ত যুবক-মণ্ডলী—এমন কি, উচ্চ শ্রেণীর ব্রাহ্মণেরাও ভক্তি ও প্রীতিসহকারে এই সাধারণ কার্যে যোগ দিল। এইবার রথ টানিবার উদ্যোগ হইতেছে। লোকেরা রমণীসুলভ বিবিধ ভাবভঙ্গী প্রকাশ করিতেছে। এই সকল ভাবভঙ্গীর সহিত উহাদের নেত্রস্ফুর্ত পৌরুষিক তেজ ও স্কন্ধদেশের বিশালতা মিশ খাইতেছে না। উহারা গুরুকেশভার উন্মোচন করিয়া, এবং বলয়ভূসিত বাহু উত্তোলন করিয়া, কেশে দৃঢ় গ্রন্থি বন্ধন করিল।

 পুনর্ব্বার সঙ্কেত। ঢাক ঢোল সরোযে বাজিয়া উঠিল; সজোরে তুরীদ হইতে লাগিল; তাহার সহিত মানব-কণ্ঠ-নিঃসৃত মহা নিনাদ সম্মিলিত হইল; বাহুর পেশীসমূহ সঙ্কুচিত হইল;—রজুগুলিতে টান পড়িল। কিন্তু এই বিরাটযন্ত্রটি একটুও নড়িল না। গতবর্ষের রথযাত্রার পর হইতে, উহা স্থূল মৃত্তিকার মধ্যে আবদ্ধ।

 একজন প্রধানের অনুজ্ঞাক্রমে, আরও ভাল-করিয়া সমবেত চেষ্টা আরব্ধ হইল। এইবার বোধ হয়, আর কোন বাধা হইবে না। আরও অনেক লোক দোঁড়িয়া আসিল; তুষার-শুভ্র-যজ্ঞসুত্রধারী বৃদ্ধগণ, এই কৃষ্ণ রজুর সহিত তাহাদের শুভ সূত্র সম্মিলিত করিল; জনতা হইতে একটা মহা কোলাহল সমুখিত হইল; বাহু ও প্রকোষ্ঠের মাংসপেশী আরও দৃঢ় কঠিন হইয়া উঠিল। তবু কিছুই হইল না! রজ্জ্বগুলি সুদীর্ঘ মৃত ভুজঙ্গবৎ হতাশ হইয়া হস্ত হইতে ভূতলে ঋলিত হইল!

 তথাপি উহারা বেশ জানে,—দেবতার রথ নিশ্চয়ই চলিবে। সহস্র বৎসর হইতে আবহমানকাল পর্য্যন্ত রথ অবাধে চলিয়াছে। যাহাদের বাহু এক্ষণে ধূলিসাৎ হইয়া গিয়াছে, যাহাদের আত্মা বহুকাল-যাবৎ দেহান্তর