পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোবের অদ্ভুত শৈল।
১৪১

হইবে, সেই মন্দিরের কোণে রথ আসিয়া যখন অনেকক্ষণ থামিল, সেই অবসরে একজন প্রদর্শক ও একজন ব্রাহ্মণকে লইয়া, একটু নিস্তব্ধতা ও মুক্ত বায়ুর অন্বেষণে, সেই বৃহৎ দালানের জটিল অরণ্য—সেই সহস্র-স্তম্ভ মণ্ডপ-শালা—সেই তমসাচ্ছন্ন অসংখ্য পার্শ্ব-দালানের উৰ্দ্ধদেশে মন্দিরের সেই বিশাল বিস্তীর্ণ ছাদের উপর আবার আরোহণ করিলাম। প্রভাতে যেরূপ মরুবৎ শূন্য দেখিয়াছিলাম, এখনও সেইরূপ। কিন্তু সপ্ত ঘটিকার সূর্যালোকে এই স্থানটি আরও ভগ্নপ্রায়—আরও দীনভাবাপন্ন বলিয়া প্রতীয়মান হইল। রক্তিম-ধূসরবর্ণ;—জরা-জাত বলি-রেখার ন্যায় সর্ব্বত্র। ফাট্ ধরিয়াছে—চীড় পড়িয়াছে। এখনও যথেষ্ট প্রভাত; সূর্য্য এখনও যথেষ্ট নিয়ে; এই ছাদের উপর এখনও বেশ বসা যায়; এমন কি, এই সব অমানুষী মন্দির-চূড়ার দীর্ঘ-প্রক্ষিপ্ত ছায়াতলে দিব্য আরামে শয়ন করাও যায়।

 এই ছাদ,‘ষ্টেপ’ নামক রুসিয়ার অধিত্যকা ভূমির ন্যায় সুবিস্তীর্ণ। কিনারায়, বাদুড়ের ডানা-যুক্ত কতকগুলি পুরাতন ক্ষুদ্র দেবমূর্তি স্বকীয়। চরণযুগল দর্শন করিবার জন্যই যেন বহির্দিকে ঝুঁকিয়া রহিয়াছে। ইহা ছাড়া আর কিছুই নাই;—সমস্তই সমতল। জীর্ণ শীর্ণ লুপ্ত-প্রলেপ দেবমূর্ত্তিসমন্বিত মন্দিরচুড়া ভিন্ন এখানে আর কিছুই নাই;—চুড়াদিগের মধ্যে এক . একটা বিস্তৃত ব্যবধান-পরিসর। সমতল ছাদ হইতে চূড়াগুলি দূরে-দূরে অবস্থিত;— মন্দিরের আয়তন এতই বৃহৎ।

 ইতস্ততঃ, খাতের আকারে কতকগুলি বিচরণভূমি এখান হইতে দৃষ্টিগোচর হইতেছে। তমসাচ্ছন্ন মণ্ডপশাল-সমুহের মধ্যে—কোনরূপ প্রকারে যেন জায়গা যাচাইয়া এই বিচরণভূমি রচিত হইয়াছে। উহার মধ্যে যেটি সকলের মধ্যস্থলে অবস্থিত, তাহাতে বটবৃক্ষ রোপিত;—সেই বটবৃক্ষের সবুজ মাথাগুলি ছাদ পর্য্যন্ত উঠিয়াছে, এবং তাহাতে ফুল ধরিয়াছে। মন্দিরের যে স্থানটি সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র—সেই ভীষণ গুপ্তস্থান