পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১৪৪

উদ্দেশে কতকগুলি অনুরোধপত্র ত্রিবন্ধুরে প্রাপ্ত হইয়াছিলাম। প্রথমেই আমি ব্রাহ্মণদিগের গৃহে উপস্থিত হইলাম। ভারতে, ব্রাহ্মণেরাই সর্ব্বাপেক্ষা বিশিষ্ট ও পরিশুদ্ধ।

 গুরুভার, পিণ্ডাকৃতি, উচ্চ-"ভিত"-বিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র একতালা গৃহ। এই মাদুরা নগরে ব্রাহ্মণদিগের যত গৃহ, সমস্তই এই আদর্শের। একটা বারাণ্ডা বারাণ্ডার থামের মাথায় বিকটাকার জীবজন্তুর মস্তক। একটা পাথরের সিঁড়ি; সেই সিঁড়ি দিয়া গৃহের অভ্যর্থনাশালায় যাওয়া যায়। সেখান হইতে লতাপাতার কাজ করা অতীব ক্ষুদ্র তিনটি গবাক্ষ দিয়া নীচের রাস্তা দেখিতে পাওয়া যায়। এই ঘরে গৃহস্বামী আমাকে অভ্যর্থনা করিলেন। তিনি পলিতকেশ বৃদ্ধ; চারিটি যুবক তাহাকে ঘিরিয়া আছে;—ইহারা তাহার পুত্র। ইহাদের দীর্ঘ নেত্র নীলকৃষ্ণ অঞ্জনরেখায় অঙ্কিত। পরিচ্ছদের মধ্যে একটা ধুতি কোমরে জড়াননা; কিন্তু ইহাতে করিয়া তাহাদের উদাত্তভাব, বিশিষ্টতা ও কুলগৌরবের কিছুমাত্র লাঘব হয় নাই। ঘরটি চুকাম-করা, খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, কি একটা সুগন্ধি ধূপে আমোদিত; সাজসজ্জাও নিতান্ত অশোভন নহে। আরামকেদারাগুলি খোদিত আব্লুস্ কাঠের। দেয়ালের উপর, গিণ্টিকরা “ফ্রেমে” পুরাতন জলরঙের ছবি সংরক্ষিত;—ছবিগুলি বিষ্ণুর অবতার-মুর্ত্তি। কুমিতলে সুন্দর ভারতীয় গালিচা, এবং ফুলকাটা কাপড়ে আচ্ছাদিত গদী। আমার আগমনে ইহারা একটু বিস্মিত হইল; কেন না, বৈদেশিকেরা এখানে বড় একটা আইসে না; তথাপি, ভদ্রতা ও আতিথ্য প্রদর্শন পূর্ব্বক গৃহের সমস্ত অংশ আমাকে দেখাইতে চাহিল। প্রথমে একটি অন্তঃপ্রাঙ্গণ প্রাচীরবেষ্টিত ও বিষাদময়। একটা “মকুটে মারা” বটগাছের ছায়ায় মেষ ও ছাগল বিশ্রাম করিতেছে। তাহার পর, গৃহের ছাদ;—ছাদে পায়রারা বাস করে ও কাকেরা আসিয়া বসে। সেখান হইতে, মাদুরাব প্রাচীন রাজাদিগের প্রাসাদ দেখা যায়;— উহা সপ্তদশ শতাব্দীর