পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
১১০

সেই বৈচিত্র্যহীন শূন্যতা; আবার সেই নিস্তব্ধতা—যাহা কেবল ঝিল্লীর আনন্দ-রবে মুখরিত।

 অরণ্যের এই মহা-নিস্তব্ধতার মধ্যে, নৈশজীবনের স্পন্দন ও বিকাশ বেশ অনুভব করা যায়। এই অরণ্য কত শত মৃগের বিচরণভূমি;কেহ বা শত্রুভয়ে সতর্ক হইয়া চারি দিক নিরীক্ষণ করিতেছে, কেহ বা আহার-অন্বেষণে প্রবৃত্ত। একটু ছায়া নড়িলেই না জানি কত মৃগের কান খাড়া হইয়া উঠে—কত মৃগের চক্ষু-তারা বিস্ফারিত হয়। * * * এই রহস্যময় বনপথটি বরাবর সিধা চলিয়াছে; ইহা ম্লান ধূসরবর্ণ, আর ইহার দুইধারে কৃষ্ণবর্ণ তরু-প্রাচীর। উহার সম্মুখে, পশ্চাতে, চতুর্দ্দিকে যোজন-ব্যাপী দুর্ভেদ্য জটিল শাখাজাল বিস্তৃত হইয়া অরণ্য-ভূমিকে কিরূপ পীড়ন করিতেছে, তাহা সহজেই অনুমান করা যায়।

 রজনীর অন্ধকারে আমাদের চক্ষু এখন অভ্যস্ত হইয়াছে; তাই স্বপ্নের মত অস্পষ্ট কখন-কথন দেখিতে পাই, ইদুর-জাতীয় একপ্রকার জীব মখমল-কোমলপদ বিক্ষেপে নিঃশব্দে গর্ত্ত হইতে বাহির হইয়াই আবার অন্তর্হিত হইতেছে।

 অবশেষে প্রায় ১১টায় সময় দেখা গেল, স্থানে স্থানে, অল্প অল্প আগুন জ্বলিতেছে, ভগ্নাবশেষের দীর্ঘায়তন গুরুভার প্রস্তর-ফলকসমূহ পথের দুইধারে বিকীর্ণ; এবং গাছের মাথা ছাড়াইয়া, দাগোবা-সমুহের প্রকাণ্ড ছায়া-চিত্র আকাশপটে অঙ্কিত। এগুলি যে পৰ্বত নয়—ভূগর্ভনিহিত নগরের মন্দির-চূড়ামাত্র—তাহা আমি পূর্ব্ব হইতেই জানিতাম।

 আজ রাত্রে, এইখানকার একটি কুটীরে আশ্রয় লইলাম। নন্দনকাননের ন্যায় সুন্দর একটি ক্ষুদ্র বাগানে এই কুটীরটি অবস্থিত। যাইবার সময় ল্যাষ্ঠানের আলোকে দেখিতে পাইলাম, ফুল ফুটিয়াছে।:::*:::*:::*:::*:::

 এক্ষণে প্রভাত হইয়াছে। আমি যে স্থানে আছি, তাহার নীচে,