পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১৫২

গুড়া হইয়া মাটিতে পড়িতেছে ও পচিয়া উঠিতেছে। বিচিত্র কাল্পনিক জীবজন্তু; কাগজ ও ময়দাপিণ্ডে নির্ম্মিত সজীব হাতীর প্রমাণ সাদা হস্তি-মূর্তি —সমস্তই কোণে কোণে পচিতেছে। ধর্ম্মের গাভীগণ, ও যে সব জীবন্ত হাতী কুটিমতলে মুক্তভাবে বিচরণ করে, উহারা সর্ব্বত্রই তাহাদের বিষ্ঠা ছড়াইয়াছে—নগ্নপদের ঘর্ষণে মসৃণীকৃত চক্চকে তৈলাক্ত মেজের উপরেও ছড়াইয়াছে। বড় বড় বাদুড় চামচিকা এই ভীষণ খিলান-মণ্ডপে বংশবৃদ্ধি করিতেছে; উহারা, নৌকার পালের মত, বড়-বড় কালো ডানাগুলা সর্ব্বত্রই নাড়া দিতেছে কিন্তু তাহার শব্দ শোনা যায় না—পালকের ডানা হইলে বোধ হয় খুব শব্দ হইত।••••••

 অভ্যন্তরস্থ একটা মুক্তাকাশ অঙ্গনের মধ্যে সন্ধ্যার আলো আবার আমি মুহূর্তকাল দেখিতে পাইলাম। সেখানে আর কেহই নাই, কেবল কতকগুলা ময়ূর, প্রস্তরময় পশুমূক্তির উপর বসিয়া বোরা-ফেরা করিতেছে। প্রাচীর-ঘেরের উর্দে, ন্যূনাধিক দূরে, কতকগুলা লাল ও সবুজ মন্দির-চূড়া মাথা তুলিয়া রহিয়াছে। এই দেবমূর্তিময় চূড়াগুলি চিরবিস্ময়জনক। এই চূড়ার গায়ে, রাশীকৃত দেবতাদের মাঝামাঝি একস্থানে, চাতক ও টিয়ার নীড় ঝুলিতেছে এবং সেই সব নীড়ের চতুষ্পার্শে পাখীগুলা নড়া-চড়া করিতেছে এবং যেখানে শূল-মুখের ন্যায় কতকগুলা গোঢ় উঠিয়াছে এবং যাহা এখনো সূর্যকিরণে আলোকিক,—সেই উদ্ধতম চূড়াদেশের খুব নিকটে কাকেরা চীলদিগের সহিত উন্মতভাবে ঘোর-পাক্‌ দিতেছে।

 এই অঙ্গন ছাড়াইয়া, মন্দিরের আর একটি গভীরতর অংশে, আমি পুরোহিতকে অবশেষে দেখিতে পাইলাম। পূর্ব্বেই তাহার নিকট আমার সম্বন্ধে অনুবোধ-পত্র পাঠান হইয়াছিল; দেবীর বেশভূষা তিনিই আমাকে দেখাইবেন, এইরূপ কথা আছে।

 বোধহয় কাল আমি সে-সব বেশভূষা দেখিতে পাইব না, কেননা কাল একটা উৎসবের দিন। শ্রীরাগমের বিষ্ণু যেমন প্রতিবৎসর রথে